Header Ads

মৃত্যুর তিন হাজার বছর পর ফেরাউনের পাসপোর্ট জটিলতা


পাসপোর্ট, এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাওয়ার জন্য এই বস্তুটির দরকার হয়। সরকার কর্তৃক ইস্যু কৃত পাসপোর্ট নিয়ে মানুষ বিদেশ গমন করে। তবে আপনাকে যদি বলা হয় হাজার বছর আগে মারা যাওয়া কোনও ব্যক্তিকে এক দেশ থেকে আরেক দেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য পাসপোর্টর দরকার হয়েছিল তাহলে আপনার কেমন লাগবে? আর সেই ব্যক্তিটি যদি হয় দ্বিতীয় রামসিস বা ফেরাউন তবে নিশ্চয়ই আপনি আরও অবাক হবেন। হ্যা, মিশরের নীল নদে ডুবে সলিল সমাধী হওয়া ফেরাউনের হাজার পর অন্য দেশে যাওয়ার জন্য পাসপোর্টের দরকার পড়েছিল এবং সেটি ছিল একটি বিস্ময়কর কাহিনী।

ফেরাউন ছিল মিশরীয় সম্রাটদের উপাধী। মুসলিমরা সাধারণত হযরত মূসা আ: আর কাহিনী থেকে ফেরাউনের গল্প শুনে থাকে। ফেরাউনের পাসপোর্ট কাহিনী জানার পূর্বে চলুন সংক্ষেপে আমরা ফেরাউনের পরিচয় সম্পর্কে জেনে আসি।

ফেরাউনের আসল নাম দ্বিতীয় রামসিস। তার জন্ম আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৩০৩ সালে এবং মৃত্যু জুলাই বা আগস্ট ১২১৩ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে। দ্বিতীয় রামসিস ক্ষমতায় ছিল ১২৭৯ থেকে ১২১৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত। রামসিস দ্য গ্রেট বা মহান রামিসেস হিসেবেও পরিচিত ছিলেন তিনি। প্রায়শই তাকে মিশরীয় সাম্রাজ্যের সবচেয়ে মহান, সবচেয়ে উদযাপিত সবচেয়ে শক্তিশালী ফারাও হিসেবে বিবেচনা করা হয় তার উত্তরসূরিগণ এবং পরবর্তী মিশরীয়রা তাকে "মহান পূর্বপুরুষ" বলে সম্বোধন করতো

মৃত্যুকালে দ্বিতীয় রামসিসের বয়স কত ছিল তা নিয়ে নানান মত রয়েছে, তবে ধারনা করা হয় তিনি ৯০ বা ৯১ বছর বয়েসে মারা গিয়েছিলেন মৃত্যুর পর তাকে ভ্যালি অব দ্য কিংসের একটি সমাধিতে কবরস্থ করা হয় এবং পরবর্তীতে তার দেহকে একটি রাজ সংগ্রহশালায় স্থানান্তর করা হয় ১৮৮১ সালে রামসিসের দেহ পুনরায় আবিষ্কার করা হয়, এবং বর্তমানে তার দেহ মিশরের কায়রো জাদুঘরে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে

ফেরাউন বা দ্বিতীয় রামসিসের সংক্ষিপ্ত জীবনী শুনলেন, এবার আসা যাক আসল ঘটনায়। তখন ১৯৭৪ সাল, ফ্রান্সের বিখ্যাত ল্যুভর জাদুঘরে চলছিল ঐতিহাসিক সংগ্রহশালা প্রদর্শনী, ফ্রান্স সরকারের আমন্ত্রণে মিশর সরকার ফেরাউনের মমীকে এই প্রদর্শনীতে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে কিন্তু বাধা হয়ে দাড়ায় ফ্রান্সের আইন। কারণ তখন ফ্রান্সে আইন ছিল কোনও ব্যক্তিকে ফ্রান্সে প্রবেশ করতে হলে তার অবশ্যই পাসপোর্ট থাকা লাগবে, তাই সে জীবিত হোক কিংবা মৃত।

ফ্রান্সে ফেরাউনকে নিয়ে যাওয়ার জন্য সর্বপ্রথম দরকার পড়েছিল তার একটি বৈধ্য পাসপোর্ট, আর তাই মিশর সরকার ফেরাউনের মৃত্যূর ৩ হাজার বছর পর তার নামে একটি পাসপোর্ট ইস্যু করে। রামসিসের নামে যে পাসপোর্টটি ইস্যু করা হয়েছিল সেটাতে তার পদবীর স্থলে লেখা হয়েছিল মিশরের রাজা, জাতীয়তা লেখা হয়েছিল মিশরীয়, জন্ম তারিখ লেখা হয়েছিল ১৩০৩ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ, পাসপোর্টটি ইস্যু করার তারিখ ছিল ৯ মার্চ ১৯৭৪ সাল এবং এক্সপাইরি ডেট ছিল ৯ মার্চ ১৯৮১ সাল।

রামসিসের পাসপোর্ট ফ্রান্সে উন্নত প্রযুক্তির ল্যাবে স্ক্যান করা সহ নানা রকম বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা করা হয় এবং তার জিন, বয়স, মৃত্যুর কারণ ইত্যাদি সম্পর্কে নিশ্চিত হবার পর তার পাসপোর্ট বৈধ বলে ঘোষনা করা হয়।

ফেরাউনকে যখন বিমানে করে ফ্রান্সে নিয়ে আসা হয় তখন ফ্রান্স সরকার তাকে পূর্ণ সামরিক, ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অর্ভ্যর্থণা জানিয়েছিল। তাকে পূর্ণ রাজার সম্মানে সম্মানীত করা হয়েছিল এবং ফ্রান্স সেনাবাহিনী তাকে রাষ্ট্রের সবোর্চ গার্ড অব অনার প্রদান করেছিল।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.