Header Ads

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও জনপ্রিয় ৫টি গ্রাম্য মেলা

বাংলাদেশের লৌকিক উৎসব হিসেবে মেলা অত্যন্ত জনপ্রিয় অতীতে মেলা মূলত গ্রামকেন্দ্রিক সামাজিক-সাংস্কৃতিক উৎসব হিসেবে প্রচলিত থাকলেও বর্তমানে মেলা গ্রামের পরিমণ্ডল অতিক্রম করে শহরে-নগরে স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশে এমন কোনো জেলা নেই যেখানে বছরের নানা সময়ে কোনও না কোনও মেলা বসে না আজকের আমি আপনাদের বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ৫টি মেলা বিষয়ে আলোচনা করো।

বাংলাদেশের প্রচলিত মেলা গুলো আসলে বাংলায় নানা ধরনের ধর্মীয় কৃত্যানুষ্ঠান উৎসবের সূত্র ধরেই উৎপত্তি হয়েছে সেদিক দিয়ে বাংলাদেশের মেলা গুলো হাজার বছরেরও অধিক পুরনো বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের গ্রাম-শহর জুড়ে প্রতিবছর এখনো পাঁচ হাজারের অধিক মেলা অনুষ্ঠিত হয় আসুন এবার আমরা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও পুরাতন ৫টি মেলা দেখে আসি।

৫. ধামরাইয়ে রথের মেলা:


ঢাকার ধামরইয়ে প্রায় একমাস ব্যাপী অনুষ্ঠি হয় রথ উৎসব এবং রথের মেলা। এই মেলাটি বাংলা পঞ্জিকার সাথে সংযুক্ত এবং প্রতিবছর আষাঢ় মাসে এটি অনুষ্ঠিত হয় শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে প্রতিবছর রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয় মূলত এই রথ যাত্রাকে কেন্দ্র করেই ধামরাইয়ে এই মেলাটি অনুষ্টিত হয়।  রাস্তার দুই ধারে মেলার স্টল বসানো হয় এবং সেখানে শোভা পাই বাঙ্গালি সংস্কৃতির নানা উপকরণ ও ঘরের বিভিন্ন তৈজসপত্র।  

এখানে মূলত ঢাকার আশে পাশের ব্যবসায়ীরা তাদের পন্যের পসরা সাজিয়ে বসে। বিভিন্ন ধরনের স্টল স্থাপনের পাশাপাশি দেশবিখ্যাত সার্কাস, নাগরদোলা, পুতুল নাচ, মোটরসাইকেলর মৃত্যুকূপ খেলা এই মেলায় দেখতে পাওয়া যায়।  এছাড়াও বিভিন্ন রকমের খাবার, পুতুল, বাশি, খেলনা, শাড়ি, চুরি সহ নানান ধরনের জিনিস পাওয়া যায় এই মেলায়। প্রায় ৭ দিনের মতো চলে ঢাকার এই প্রাচীন মেলাটি।

৪. বগুড়ার পোড়াদহ মেলা:


বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি প্রাচীন লোকজ মেলা হচ্ছে পোড়াদহ মেলা বগুড়া জেলা শহর হতে ১১ কিলোমিটার পূর্বদিকে ইছামতি নদীর তীরে পোড়াদহ নামক স্থানে প্রতি বছর এই মেলাটি বসে। বাংলাদেশের প্রাচীন মেলাসেমূহের মধ্যে পোড়াদহ মেলা অন্যতম মেলাটি এখান থেকে প্রায় চার শত বছর পূর্বে প্রথম শুরু হয়েছিল বলে ধারণা করা হয় প্রতি বছর বাংলা সনের মাঘ মাসের শেষ তিন দিনের মধ্যে আগত বুধবারে শুরু হয় এই মেলাটি। আনুষ্ঠানিকভাবে এটি একদিনের মেলা হলেও স্থানীয়ভাবে এটি এক সপ্তাহ ধরে চলে আনুষ্ঠানিক মূল মেলার পরদিন বৃহস্পতিবার একই স্থানে এবং আশেপাশের গ্রামে চলে বউ মেলা প্রায় সমগ্র উত্তরাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা এখানে ব্যবসা করতে আসে। মাছ, আসবাবপত্র, কসমেটিক, মিস্টি, খেলনা সহ নানান ধরনের জিনিসের স্টল বসে এই মেলায়। মেলায় কেনাকাটার পাশাপাশি বিনোদনেরও ব্যবস্থা থাকে ছোটদের জন্য থাকে নাগরদোলা, মিনি ট্রেন, ঘোড়ার গাড়ি, ও সার্কাস এবং বড়দের জন্য থাকে মটর সাইকেল খেলা, যাত্রাপালা, ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

৩. যশোরের মধু মেলা:


যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়িতে প্রতি বছর বসে সপ্তাহব্যাপী মধু মেলা বাংলা সাহিত্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়৷কবির বাড়ির চারিধারে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল থেকে আগত ব্যবসায়ীরা তাদের পন্যের পসরা সাজিয়ে বসে। কাঠের জিনিস, মাটির জিনিস, লোহার জিনিস, খেলনা, অলংকার, খাবার সব কিছুই পাওয়া যায় এই মেলায়। মেলায় আগতদের জন্য থাকে সার্কাস, পুতুল নাচ, যাত্রা, এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা। প্রতিবছর ইংরেজি জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে এই মেলা বসে এবং সপ্তাহব্যপী এই মেলা সমগ্র দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষদের মিলন মেলায় পরিণয় হয়। এই মেলায় আগমণকারীরা মেলায় কেনাকাটা করা ছাড়াও মহাকবির স্মৃতিবিজড়িত বাড়িতে ভ্রমণ করতে পারে।

২. নারায়নগঞ্জের লাঙ্গলবন্দের মেলা:


চৈত্র মাসের শুক্লাষ্টমী বা অশোকাষ্টমী তিথিতে পুণ্যস্নান করতে হাজার সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষ নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দে একত্রিত হয় এবং সেই উপলক্ষে সেখানে অনুষ্ঠিত হয় মেলা। লাঙ্গলবন্দের আদি ব্রহ্মপুত্রনদের তীর ধরে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এই মেলা জমে ওঠে এবং তার পাশেই বসে সারা দেশ থেকে আগত সাধু-সন্ন্যাসীদের আস্তানা এই মেলায় কাঠের সোপিস, মাটি-কাঠ-ঝিনুক দিয়ে তৈরি মেয়েদের গহনা, হাতের শাখা, ব্রেসলেট, নকশি জুতা, ও বিভিন্ন রকমের খাবার পাওয়া যায়। হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষদের জন্য তাদের উপাসানলয়ের অনেক ধর্মীয় জিনিসপত্র এই মেলায় পাওয়া যায়। এই মেলায় বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, মায়ানমার, ও নেপাল থেকেও হিন্দু সাধু-সন্নাসীরা আগমণ করে থাকে। তাদের স্নান ও ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে এই মেলা প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চলে। লাঙ্গলবন্দের মেলায় নারায়ণগঞ্জের আশে পাশের জেলার ব্যবসায়ীরাও তাদের পন্য বিক্রয়ের জন্য নিয়ে আসে।

১. সাতক্ষীরার গুড়পুকুরের মেলা:


গুড়পুকুরের মেলাকে বাংলাদেশের সর্ব বৃহৎ মেলা হিসেবে ধরা হয়। সাতক্ষীরা শহর জুড়ে অনুষ্ঠিত এই মেলা ৩০০ বছরের পুরানো। বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী ভাদ্র মাসের শেষ দিনে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মনসা পূজাকে কেন্দ্র করে এই মেলা শুরু হয় এবং যেটি চলে দীর্ঘ একমাস ধরে। বর্তমানে এই মেলার পরিসর কমে আসলেও ২০০০ সাল পর্যন্ত এই মেলা সাতক্ষীরা শহরের ৬ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অনুষ্ঠিত হতো। সারা বাংলাদেশ থেকে ব্যবসায়ীরা তাদের পন্য সামগ্রী নিয়ে এই মেলায় হাজির হয় এবং একমাস ধরে এই মেলা নারী, পুরুষ ও শিশুদের ভীড়ে মুখরিত থাকে। এমন কোনও জিনিস নাই যা এই মেলায় পাওয়া যায় না। শাড়ি, বোরকা, খেলনা, লোহার জিনিস, মাটির জিনিস, কাঠের জিনিস, কাচের জিনিস থেকে শুরু করে হরেক রকম খাবার পাওয়া যায় এই মেলায়। বর্তমানে সাতক্ষীরা পৌরসভা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে মূলত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উৎসবকে কেন্দ্র করে এই মেলার প্রচলন শুরু হলেও এখন এটি গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জন্য এক মিলনমেলা হয়ে উঠেছে।

মেলায় আগত দর্শনার্থাদের আনন্দকে পরিপূর্ণ করার জন্য আরও থাকে নাগরদোলা, ম্যাজিক নৌকা, মিনি ট্রেন, দোলনা, সার্কাস, থ্রীডি ভিডিও সহ নানান ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা।  মেলার ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায় সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোলে একটি গোলাকৃতির পুকুরের পাড়ে বট গাছের নিচে একবার এক ক্লান্ত পথিক বিশ্রাম নিচ্ছিলেন গাছের ফাঁক দিয়ে আসা রোদ পথিকের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাচ্ছিলো দেখে এসময় একটি বিষধর সাপ ফণা তুলে তাকে ছায়া দিচ্ছিলো পথিক এই দৃশ্য দেখে মনসার উদ্দেশ্যে পূজা দেওয়া শুরু করেন এবং এই পূজার প্রসাদ পুকুরে ফেলে দেওয়ার ফলে পুকুরের পানি মিষ্টি হয়ে যায় এই বিশ্বাস থেকে গোলাকৃতি পুকুরের নাম হয়ে যায় গুড়পুকুর এবং এই পুকুরকে কেন্দ্র করে যে মেলার উদ্ভব হয়েছিল সেটাই গুড়পুকুরের মেলা। 

1 টি মন্তব্য:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.