বিচিত্র তিন মানুষের গল্প এবং তাদের বিশ্ব রেকর্ড
বিচিত্র এই পৃথিবীতে বৈচিত্রতার কোনও শেষ নেই। পৃথিবীর সূচনা
লগ্ন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত পৃথিবী নানা সময়ে তার নানান রহস্য দেখিয়ে আসছে।
বিস্ময়কর গাছ, পাহাড়, পর্বত, প্রাণী, ছাড়াও
অনেক বিচিত্র জিনিসের সন্ধান পাওয়া যায় আমাদের এই গ্রহে। বড় মাছ, ছোট গাছ, অদ্ভুত ফুল
বা ফল দেখে আপনি বিস্মিতি হতে পারেন, কিন্তু এর বাইরেও এই পৃথিবীতে রয়েছে বিস্ময়কর
নানা উপকরণ। আবার পৃথিবীর সেরা জীব মানুষ তাদের উদ্ভট কাজ এবং অবিশ্বাস্য সব ক্ষমতা
দেখিয়ে বিস্ময়ের সৃষ্টি করে। আজকের পর্বে আমি আপনাদের এমনই তিন বিস্ময়কর ব্যক্তির
কথা আলোচনা করবো, যারা তাদের বিশেষ ক্ষমতা এবং কৃত কর্মের কারণে বিস্ময়ের সৃষ্টি
করেছেন। আর এই তিন ব্যক্তি হচ্ছেন বৈদ্যুতিক মানব পাজকিচ, চুম্বক বালক বগডেন এবং
বনমানুষ মাইক ডজ।
স্লাভিসা পাজকিচ:
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। অনন্য সব মানবীয় গুনের সমাহার রয়েছে মানুষের মাঝে। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব হলেও অন্যান্য জীবের মতো
মানুষেরও সব কিছুতেই রয়েছে তার একটা নির্দিষ্ট সীমারেখা। যার মধ্যে একটি হচ্ছে সহ্য সীমা। এই সীমা অতিক্রম করলে মানুষের শরীর ভেঙ্গে
পড়ে।
তবে আমাদের এই বিশ্বে এমনই একজন মানব আছেন যিনি
বৈদ্যুতিক
সহ্য সীমাকে অতিক্রম করতে
পারেন। শুধু তাই নয় তার নিজের রয়েছে এক অদ্ভুত
ক্ষমতা। আর তার সেই ক্ষমতাটি
হচ্ছে তিনি নিজ
শরীরে বিদ্যুৎ তৈরি করতে পারেন।
বিশেষ ক্ষমতাধর এই ব্যক্তির নাম স্লাভিসা পাজকিচ। ৫৪
বছর বয়সী বিস্ময়কর এই ব্যক্তির বাড়ি সার্বিয়াতে। তিনি
ব্যক্তিগতভাবে অত্যাশ্চর্য এক
ক্ষমতার অধিকারী। সাধারণত মানুষের শরীরে বিদ্যুৎ প্রবাহ করলে মানুষ বৈদ্যুতিক
শক লেগে
মৃত্যু
বরণ করে। কিন্তু পাজকিচ সেদিক থেকে
অন্য মানুষ থেকে একেবারেই
আলাদা। কারণ তিনি তার শরীরে
বিনা বাধায় উচ্চ মাত্রার বিদ্যুৎ প্রবাহ করতে পারেন। শুধু তাই নয়, পাজকিচ বিদ্যুৎ জমা করেও রাখতে পারেন তার
শরীরে
ব্যাটারির মতো। আর
তাই পাজকিচকে
তার এলাকার লোকেরা ‘বিদ্যুত মানব’ বলে ডাকে।
১৭ বছর বয়সে তিনি কারখানায় কাজ করার
সময় প্রথম নিজের দেহে এই অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য টের পান। কারখানায়
বৃষ্টিময় একদিন
তার কয়েকজন সহকর্মী অলস
ভাবে রেলিংয়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়েছিল। হঠাৎ ছিটকে সরে আসেন সবাই। তারা
অনুধাবন করেন ধাতব রেলিং বিদ্যুতায়িত হয়ে গেছে।
কৌতূহলবশত পরীক্ষা করতে সেখানে
এগিয়ে যান পাজকিচ। বিস্ময়ের সঙ্গে তিনি
লক্ষ্য করেন, অন্যদের মতো কোনও অস্বাভাবিকত্ব তৈরি
হচ্ছে না তার শরীরে।
এরপর কয়েকদিন পর
পাজকিচ সত্যিটা
যাচাই করার জন্য বৈদ্যুতিক প্লাগে হাত ঢুকিয়ে দেন। কিন্তু তিনি দেখতে পান তার শরীরে কোনও সমস্যা হচ্ছে না। এর কিছু দিন পর
তিনি আরও এক বিস্ময়কর বিষয় আবিষ্কার করেন। আর সেটি হচ্ছে, তিনি দেখেন তিনি তার শরীরে প্রয়োজনে অস্বাভাবিক তাপ
তৈরি করতে পারছেন। সেখান থেকেই তার পথচলা, বন্ধু-বান্ধবের মাঝে এই খবর ছড়িয়ে পড়া থেকে শুরু করে আজ
তিনি সবার কাছে এক বিস্ময়কর বৈদ্যুতিক মানব হিসেবে পরিচিত।
পাজকিচ ইতোমধ্যে গিনেস বুক অব রেকর্ডসে দুটি ভিন্ন
রেকর্ডের পাশে নাম লিখিয়েছেন। প্রথমবার নাম লেখান ১৯৮৩ সালে। সাধারণ মানুষ যেখানে
৫০ ভোল্ট বিদ্যুতেই কাবু হয়ে যায়, সেখানে
তিনি ২০ হাজার ভোল্ট বিদ্যুৎ প্রবাহিত
করেছিলেন তার শরীরের মধ্য দিয়ে। এর
২০ বছর
পর ২০০৩ সালে তিনি তার শরীরের তাপ দ্বারা
এক কাপ পানিকে ৯৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উন্নীত করেন। যেটি করতে তার সময় লেগেছিল মাত্র ১ মিনিট ৩৭ সেকেন্ড।
২০১৬ সালে এই ব্যক্তি এসেছিলেন ফ্রান্সের এক রিয়েলিটি শোতে।
এবং সেখানে তিনি বিদ্যুতকে সহ্য করার নানান ক্ষমতা দেখিয়ে হাজার হাজার মানুষকে
বিমোহিত করেছিলেন। সেই অনুষ্ঠানে তিনি নিজেকে বৈদ্যুতিক মানুষ হিসেবে পরিচয় দেন। সেখানে
তিনি তার শরীরে ২০ হাজার ভোল্ট বিদ্যুত সঞ্চালিত করেন, তার নিজের শরীরের মাধ্যমে
বিদ্যুত সঞ্চালিত করে তিনি হট ডোগ এবং ডিম সিদ্ধ করেন। এখানেই শেষ নয়, নিজের শরীরে
বিদ্যুত প্রবাহ দেখাতে তিনি হাতে ৩০ হাজার ভোল্ট নিয়ে মাথা দিয়ে বৈদ্যূতিক বাতি
জ্বালান এবং লোহার দন্ডে আগুন জ্বালিয়ে দেখান। জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল ডিসকভারিও
এই আশ্চর্য ব্যক্তিকে নিয়ে একটি পর্ব প্রচার করেছিলো এবং তাদের দৃষ্টিতে পাজকিচ একজন প্রকৃত
‘Super Human’।
মাইক ডস:
বন মানুষের কথা আমরা অনেকেই শুনেছি কিন্তু বাস্তবে হয়তো দেখিনি। আদিম যুগে মানুষ যখন সভ্যতার সন্ধান
পায়নি তখন মানুষ বনে-জঙ্গলে বসবাস করতো। আবার ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় অনেক সন্ন্যাসী বা ধর্ম
প্রচারক গন বসবাসের জন্য নিরিবিলি বনকে বেশী পছন্দ করতেন। বর্তমানে অনেকে বিভিন্ন অভিযানের জন্য বনবাস করে থাকেন
তবে সেটি হাতে গোনা কয়েক দিনের জন্য। কিন্তু আজকের এই আধুনিক বিশ্বে স্থায়ীভাবে বনবাসের কথা
হয়তো কেউ চিন্তাও করতে পারে না। আপনি
চিন্তা করতে পারুন আর নাই পারুন মাইক ডস কিন্তু অসম্ভবকে সম্ভব করে ছেড়েছেন। তিনি আধুনিক এই বিশ্বে জন্ম নিয়েও একজন বনমানুষ।
বন মানুষের কথা আমরা অনেকেই শুনেছি কিন্তু বাস্তবে হয়তো দেখিনি। আদিম যুগে মানুষ যখন সভ্যতার সন্ধান
পায়নি তখন মানুষ বনে-জঙ্গলে বসবাস করতো। আবার ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় অনেক সন্ন্যাসী বা ধর্ম
প্রচারক গন বসবাসের জন্য নিরিবিলি বনকে বেশী পছন্দ করতেন। বর্তমানে অনেকে বিভিন্ন অভিযানের জন্য বনবাস করে থাকেন
তবে সেটি হাতে গোনা কয়েক দিনের জন্য। কিন্তু আজকের এই আধুনিক বিশ্বে স্থায়ীভাবে বনবাসের কথা
হয়তো কেউ চিন্তাও করতে পারে না। আপনি
চিন্তা করতে পারুন আর নাই পারুন মাইক ডস কিন্তু অসম্ভবকে সম্ভব করে ছেড়েছে। তিনি আধুনিক এই বিশ্বে জন্ম নিয়েও একজন বনমানুষ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম ওয়াশিংটনের বাসিন্দা মাইক ডজ গত ২৫ বছর ধরে মনুষ্য
জগত ত্যাগ করে স্থায়ীভাবে জঙ্গলে বসবাস করছেন। তার আচার-ব্যবহার ও চেহারায় তিনি বর্তমানে একজন পূর্ণ
বনমানুষ। এখন থেকে ২৫ বছর আগে ডজ এই জগত সংসারকে
ত্যাগ করে বনবাসের
উদ্দেশ্যে রওনা হন। তার
বনবাসে যাওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয় তিনি এই মনুষ্য জগতে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারতেন না। তিনি সর্বদা ভাবতেন এই মনুষ্য জগতে তিনি
নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবেন না। বনবাসে
যাওয়ার আগে তারুণ্যে তিনি ছিলেন একজন মার্কিন নৌসেনা এবং সমর বিশেষজ্ঞ। তিনি সর্বদা নিজেকে
দার্শনিক এবং শান্তি বাদী
হিসেবে পরিচিত করতেন। তিনি
একজন সমর বিশারদ হলেও তিনি যুদ্ধ-বিগ্রহকে খুবই ঘৃণা করতেন। আর তাই তিনি শান্তির অন্বেশায় বনবাসের সিদ্ধান্ত
নেন।
অবশ্য এটি তার বংশগত
আকাঙ্ক্ষাও বলা যেতে পারে,
কারণ মাইক ডজের
দাদাও বনবাসে গিয়েছিলেন
এবং তিনি কয়েক দশক একাকী বনে-জঙ্গলে বসবাস করেছিলেন। দাদার বনবাসের কাহিনী শুনে শৈশব থেকেই ডজের মনে বনবাসের
আকাঙ্ক্ষা জেগে ছিল।
মাইক ডজ গত দুই দশক ধরে একাকী ঘুরে বেড়াচ্ছেন অলিম্পিক উপদ্বীপের গহীন অরণ্য হোহ রেইন
ফরেস্টে। বর্তমানে এই জঙ্গলই
তার আবাস স্থল। এই বনের পশু-পাখি, জীব-জন্তু, গাছ-গাছালি এখন তার পরিবারের সাথি। এদের সাথেই তিনি থাকেন মাসের পর মাস বছরের পর
বছর।
এই বনের ফল-ফলাদি এবং পোকা
মাকড় এখন তার
প্রধান খাদ্য। দীর্ঘ দিন বনে বাস
করার ফলে ডজের চেহারাও হয়ে গেছে বনমানুষের মতো। জট পাকানো চুল আর তাতে জন্মেছে পরগাছা। তার নিজের মাথাটায় যেন একটি জঙ্গল।
National Geographic Channel সর্বপ্রথম এই ব্যক্তির জীবনকে জনসম্মুখে
তুলে আনেন। পরে অবশ্য মাইক ডজের বনবাসের তথ্য নিয়ে এই টিভি চ্যানেল একটি ধারাবাহিক
অনুষ্ঠানের সূচনা করে। যেখানে মাইক ডজের দৈনন্দিন জীবনকে তারই উপস্থাপনায় তুলে ধরা
হতো।
বগডেন:
দ্য ডেইলি
মেইল ও এমএসএনবিসি’র
কল্যাণে সারাবিশ্ব তোলপাড় হয়ে গেছে এক বালকের খবরে। কারণ তারা এমন এক আশ্চর্য বালকের সন্ধান নিয়ে
এসেছে যে কিনা চুম্বক বালক নামে পরিচিত। সারা বিশ্ব তোলপাড় করা এই বিস্ময় বালকের
নাম বগডেন। সার্বিয়ায় বসবাসকারী
এই বালকের ২০১৬ সালে বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর। বিশ্বের সকল প্রধান সংবাদ সংস্থাগুলো এই বালককে নিয়ে বিশেষ সংবাদ
পরিবেশন করেছিল সেই সময়ে। সম্প্রতি
ডিসকভারি চ্যানেলের প্রচারণায় এই চুম্বক বালকের রহস্যময় চুম্বকীয় আকর্ষণের খবরটি
বিশ্ব মিডিয়ায় আবারও ব্যাপক আলোচিত হয়েছে।
যে বিস্ময়
বালককে ঘিরে এতো বিস্ময় এবার দেখা যাক কী বিস্ময় আছে সেই বালকের
মাঝে। বিস্ময় বালকের বিস্ময়কর বিষয় এই যে, বগডেন নামক এই বালকের সমস্ত শরীর
চুম্বকের ন্যায় আকর্ষিত। চুম্বকে যেমন কোনও লৌহ জাতীয় পদার্থ
আটকে যায় তেমনি এই বালকের শরীরে যেকোনো পদার্থ চুম্বকের মতো আটকে থাকে।
এই চুম্বক বালকের বুকে
ঘরের সাধারণ তৈজসপত্র যেমন চামচ,
ছুরি, রান্না করার প্যান, গ্লাস, প্লেট ইত্যাদি দিব্যি আটকে থাকে। বগডেনের পূর্বে যেসকল চুম্বক মানবের পরিচয়
পাওয়া গিয়েছিল এবং যারা
পূর্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল বগডেন তাদের চেয়েও বেশি আলোড়ন তুলেছেন। কারণ লৌহ জাতীয় পদার্থ ছাড়াও যে কোনও
পদার্থ বগডেনের বুকে আটকে থাকে। যেমন, কলম, খাতা, পেন্সিল, মোবাইল, বই এমনকি টেলিভিশনের রিমোট কন্ট্রোলও দিব্যি এঁটে যায়
তার বুকে।
ডিসকভারি চ্যানেলে বগডেনের এই আশ্চর্য ক্ষমতা
প্রকাশের পর বিশেষজ্ঞরা ছেলেটির বিশেষত্ব
নিয়ে পরীক্ষা করে দেখছেন। প্রাথমিকভাবে
তারা নিশ্চিত হয়েছেন যে, বগডেনের
শরীরে আঠালো কোনও বিশেষত্ব
আছে এবং সেই বিশেষত্বের কারণে এমনটি হচ্ছে। যুক্তিস্বরূপ তারা বলেছেন, শুধু চুম্বকীয়
প্রভাবের কারণে এমনটি কখনোই সম্ভব নয়। কারণ ছেলেটির গায়ে অচৌম্বকীয়
পদার্থও আটকে থাকছে। সুতরাং
ছেলেটির ত্বকে বিশেষ আঠালো পদার্থ রয়েছে যা বিভিন্ন জিনিস তার শরীরে
আটকে থাকতে সাহায্য করছে।
পূর্বে যারা
চুম্বক মানব হিসেবে মিডিয়ার
দৃষ্টি কাড়তে সমর্থ হয়েছিলেন তাদের সঙ্গে বেশ মিল রয়েছে বগডেনের। পূর্বে চুম্বক মানবদের ব্যাপারে সন্দেহের তীর ছুড়েছিলেন ডিসকভারি
চ্যানেলের বিজ্ঞানীরা। কারণ তারা কেউই খালি গায়ে ও দেহ কাত না করে অপেক্ষাকৃত ভারি কিছু শরীরে আটকে থাকতে দেখাতে
পারেননি। কিন্তু এবার খোদ
ডিসকভারির বিশেষজ্ঞরাও অবাক হয়ে দেখেছেন এই বিস্ময়কর বালকের দেহে
চুম্বকের মতো বিভিন্ন
পদার্থ আটকে থাকতে। বিশ্ব
মিডিয়ায় বগডেনের এই বিস্ময়কর বিষয়টি ব্যাপক আলোড়নের সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে বগডেনের বয়স ১৫ বছর কিন্তু সে
এখনও সেই ভাবে তার চৌম্বকীয় আকর্ষন ধরে রেখেছে এবং মাঝে মাঝেই বিশ্ব মিডিয়ার
শিরোনামে চলে আসছে।
কোন মন্তব্য নেই