Header Ads

বাই সাইকেলের জন্মের ইতিকথা

বিনা খরচে দ্রুত পথ চলা ও শারীরিক ব্যায়ামের ক্ষেত্রে সাইকেলের বিকল্প নেই। সাইকেলের রয়েছে আরও অনেক উপকারিতা। এই বাহনটি খুবই সহজলভ্য, নেই পরিবেশ দূষণের ভয়, এছাড়াও নেই মারাত্মক কোনও দুর্ঘটনার ভয়। সাইকেল যার আরেক নাম বাই সাইকেল। সাইকেল শব্দটি ইংরেজি শব্দ, যার বাংলা অর্থ দ্বিচক্রযান। আমরা হয়তো মনে করতে পারি আমরা বর্তমানে সাইকেলগুলো যেমন অবয়বের দেখি এগুলো পূর্ব থেকেই এরূপ ছিল। কিন্তু তা নয়।

আজকের সাইকেলের অবয়বের সাথে পূর্বের সাইকেলের ছিল অনেক পার্থক্য। অনেক কষ্ট ও পরিশ্রমের পর আমরা আজকে এমন সুন্দর সাইকেল চালাতে পারছি। আসুন আমরা সাইকেলের জন্ম ও বেড়ে উঠার ইতিহাস জানি।

১৮১৬ সালে সর্বপ্রথম জার্মানিতে সাইকেলের উদ্ভব হয়। সে সময় সাইকেলের কোনও প্যাডেল, গিয়ার, টায়ার, চেইন ইত্যাদি যন্ত্রাংশ ছিল না। সর্বপ্রথম সাইকেল উদ্ভাবক কার্ল ভন ডেভিস ১৮১৮ সালে সর্বপ্রথম তার তৈরিকৃত সাইকেল প্যারিসে জনসম্মুখে নিয়ে আসেন। প্যাডেল হীন এই সাইকেলেরে সিটে বসে মাটিতে পা লাগিয়ে ঠেলে ঠেলে চালাতে হতো। এজন্য ইংল্যান্ডে ব্যঙ্গ করে সাইকেলকে বলা হতো ডান্ডি হর্স বা শৌখিন বাহন। 

সর্বপ্রথম এই সাইকেলের চাকা ছিল তিনটি। এরপর ১৮৬০ সালে প্যাডেল জুড়ে দেয়া হয় সাইকেলে। তবে চাকার সংখ্যা তিন থেকে কমিয়ে একে নিয়ে আসা হয়। ফলে নতুন সমস্যা হয়ে দাড়ায় যে, এই সাইকেল সবাই চালাতে পারতো না। যারা চালাত পারতো তাদেরকে সম্মানের চোখে দেখা হতো এবং তাদের অনেক কৃতিত্বপূর্ণ লোক বলে মনে করা হতো। এক চাকার এই সাইকেলগুলোকে ইউনি সাইকেল বলা হতো। তখন সার্কাসের শো গুলোতে এই সাইকেল ব্যবহার করা হতো। আজও বিশ্বব্যাপী সার্কাস শোতে এই সাইকেল ব্যবহার করা হয়। ১৮৬১ সালে প্যাডেল লাগানো হলেও সেটিতে চেইন লাগানো ছিল না। প্যাডেল ছিল সামনের চাকায়। আর এর চাকা ছিল লোহার তৈরি, ফলে রাস্তায় চলার সময় ঝনঝন শব্দ হতো। 

সাইকেলের এই ঝনঝনানি শব্দের কারণে তখন এটির নাম দেয়া হয় বান শেকার। এর বছর দশেক পরে বাজারে আসে এরিয়েল নামের নতুন এক ধরনের সাইকেল। যে সাইকেলেরও প্যাডেল ছিল সামনের চাকায় এবং এর সামনের চাকা ছিল পিছনের চাকার চেয়ে অনেক বড়।

এরপর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকমের সাইকেল তৈরি হতে থাকে। কারোও সামনের চাকা বড়, কারও পিছনের চাকা বড় , কারও বসার জায়গা নিচে আবার কারও বসার জায়গা অনেক উপরে। বিভিন্ন ধরনের সাইকেল আবিষ্কার হলেও সাইকেলগুলো চালানো সহজতর হচ্ছিল না। ওই সময় কিছু কিছু সাইকেলের চাকা ২০ ফুট পর্যন্ত উঁচু ছিল। ১৮৮০ সালে সর্বপ্রথম সাইকেলের দুই চাকা সমান পর্যায়ে নিয়ে আসা হয় এবং চেইন ও টায়ার লাগানো হয়। তবে টায়ারে হাওয়া ভরা থাকতো না। মেয়েরা যাতে স্কার্ট পরে সাইকেল চালাতে পারে সেজন্য এই সময় তৈরি করা হয় ভিন্ন এক ধরনের সাইকেল। ১৮৮৮ সালে টায়ারে সর্বপ্রথম হাওয়া ঢুকানোর ব্যবস্থা করা হয়। 

এর মাধ্যমে সাইকেলের আধুনিক যুগের সূচনা হয়। নতুন এই ব্যবস্থার মাধ্যমে সাইকেল চালানোয় স্বাচ্ছন্দ্য তৈরি হয়। ফলে বিশ্বব্যাপী সাইকেলের জনপ্রিয়তা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। বিশ্বে সাইকেল উৎপাদনের জন্য তৈরি হয় নতুন নতুন কোম্পানি। আর তাই এই সময়কে গোল্ডেন এজ অব বাই সাইকেল বলা হয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৮৯৭ সালে শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হয় ২০ লক্ষ সাইকেল। ১৯৩০ সালে আবারও সাইকেলের গঠনে আনা হয় কিছু পরিবর্তন। 

সেই থেকে সাইকেল চলে আসছে এক ঐতিহ্যবাহী বাহন হিসেবে। ১৯৪০ সালের পর থেকে আজ পর্যন্ত নানা সময়ে সাইকেলে যুক্ত করা হয়েছে ফ্যাশন নির্ভর বিভিন্ন উপাদান ও যন্ত্রাংশ। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ডিজাইনের সাইকেল দেখতে পাওয়া যায়। সাধারণ সাইকেল, হ্যান্ডেল সোজা সাইকেল, রেসিং সাইকেল, গিয়ার সাইকেল সহ বিভিন্ন সাইকেল আছে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী। তবে সকল সাইকেলের মাঝে মূল কাঠামোটাকে অবিকৃত রাখা হয়েছে।

পরিবেশ দূষণের হাত থেকে বাচা ও শারীরিক ব্যায়ামের মাধ্যমে পথ চলার জন্য আজও সাইকেল একমাত্র মাধ্যম। সেজন্য বিশ্ব দ্রুত আধুনিকতার দিকে ছুটে গেলেও সাইকেলের অগ্রযাত্রা থেমে নেই। বিশ্বব্যাপী দ্রুত যানের কদর বেশী হলেও সাইকেল তার নিজের স্থান আজও ধরে রেখেছে গর্বের সাথে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.