Header Ads

প্রাগৈতিহাসিক সমাধি রহস্য

‘Man is mortal’ মানুষ মরণশীল। পৃথিবীতে জন্ম গ্রহণকারী প্রত্যেকটি মানুষকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হয়। বহুকাল ধরে মানুষের মাঝে একটি প্রশ্ন বিরাজমান। আর সেটি হচ্ছে মানুষে মৃত্যুর পর তার আত্মা যায় কোথায়? বিভিন্ন ধর্মে এ বিষয়ে বর্ণনা করা আছে তবে ইসলাম ধর্ম ব্যতীত বাকি ধর্মগুলোর বর্ণনা পরিষ্কার নয়। এছাড়া আদিম যুগ থেকে মানুষ মৃত্যু পরবর্তী সময় নিয়ে নানান বিশ্বাসে বিশ্বাসী হয়ে আসছে। ইসলাম ধর্ম সহ অনেক ধর্মে নিয়ম আছে মরা মানুষের লাশকে সমাহিত করার।


আবার অনেক ধর্মে আছে লাশকে পানিতে ভাসিয়ে দেয়া বা পুড়িয়ে ফেলার রীতি। প্রাগৈতিহাসিক সময়ে লাশকে মাটিতে সমাহিত করার নিয়ম বেশী প্রচলিত ছিল। লাশ সমাহিত করার পরের প্রশ্ন সমাহিত করার পর মানুষের আত্মা যায় কোথায়? বেশীর ভাগ ধর্মের অনুসারীদের বিশ্বাস সমাহিত করার পর আত্মা স্বর্গে চলে যায়। কারো মতে আত্মা সমাহিত করার স্থানেই থেকে যায়, কেউ বিশ্বাস করে আত্মা পুনরায় আবার জীবিত হয়ে ফিরে আসে। প্রাচীন মিশরীয়রা মনে করতো মৃত্যুর পর আত্মা পুনরায় জীবিত হয়ে ফিরে আসে। আর সে কারণেই লাশকে মমি করে সমাহিত করা হতো। সেই মমির সাথে ধন-সম্পদ, পোশাক-পরিচ্ছেদ এমনকি দাস-দাসীও সমাহিত করা হতো। 

এর পিছনে তাদের যুক্তি ছিল যেন মৃত ব্যক্তি সেখানে আরাম আয়েশে থাকতে পারে। মূলত এই ধরনের চিন্তা চেতনা থেকেই প্রাগৈতিহাসিক মানুষরা তৈরি করতো সমাধি ক্ষেত্র। তারা প্রত্যেকটি সমাধি ক্ষেত্রকে তৈরি করতো অতি যত্ন, তাৎপর্য ও গুরুত্ব সহকারে। কারণ তাদের বিশ্বাস ছিল প্রত্যেকটি সমাধি ক্ষেত্র মৃত ব্যক্তির জন্য আলাদা একটি পৃথিবী।

প্রাগৈতিহাসিক সময়ের মতো বর্তমান সময়েও বিভিন্ন ধর্মের রীতি নীতি অনুসারে মৃত ব্যক্তিকে সমাহিত করা হয়। তবে সকল ধর্মে সমাহিত করার নিয়ম একই নয়। প্রস্তর যুগের সময় মানুষকে সমাহিত করা হতো মানব বসতির পাশে। তবে তাদের সময়ের সমাধি ক্ষেত্রগুলো বর্তমান সময়ের মতো সাধারণ ছিল না। তারা সমাধি ক্ষেত্রগুলো তৈরি করতো বড় বড় পাথর দিয়ে। একেকটি সমাধিক্ষেত্রের আকার আকৃতি ও কৌশল ছিল একেক রকম। 

আদিম মানুষেরা বড় বড় পাথরকে একটির উপর আরেকটি সাজিয়ে সমাধি নির্মাণ করে তার মধ্যে মৃত মানুষকে সমাহিত করতো। তাদের তৈরি করা সমাধিগুলো ছিল খুবই রহস্যময়। কারণ তারা অতি নিখুঁতভাবে পাথরের উপর পাথর সাজাতে পারতো। সেই সময়ের কয়েক শত বছর পরের মানুষেরা বছরের পর বছর ধরে এই পাথরের সমাধিগুলো দেখে দারুণভাবে বিস্মিত হতো। তাদের কাছে এগুলো ছিল দারুণ এক রহস্য। একটা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত মানুষ জানতো না এই বড় বড় পাথরের স্তূপ গুলো কি, বা কি আছে এর ভিতর বা কেনই বা এগুলো তৈরি করা হয়েছিল। তবে বর্তমান আধুনিক সময়ে এসে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার ফলে উদঘাটিত হয়েছে এই অজানা রহস্য। এগুলো নেহায়েতই কোনও পাথরের স্তূপ ছিল না এগুলো আসলে ছিল প্রাচীন সমাধি ক্ষেত্র।

তুরস্কের উত্তরে আবিষ্কৃত হয়েছে খ্রিষ্টপূর্ব ১৮ হাজার বছর আগের এমর একটি সমাধি ক্ষেত্র। প্রাচীন গ্রিকরাও তৈরি করতো পাথরের এমন সমাধিক্ষেত্র। মাটির উপর স্থাপিত এসব সমাধিগুলো নব্য প্রস্তর যুগে বসবাসকারী মানুষের তৈরি। বড় বড় পাথর দিয়ে এসব সমাধি ক্ষেত্রের সীমানা চিহ্নিত করা হতো। সমাধিগুলো ছিল অনেকটা ঘরের মতো। ইউরোপ, আটলান্টিক, ভূমধ্যসাগর ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে এই গঠন কাঠামোতে সমাহিত করা হতো। সব গুলো সমাধির আকার ও গঠনশৈলী এক ছিল না। এই ধরনের সমাধিগুলো ছিল খোলা একক ঘর বিশিষ্ট। দুটি পাথরের উপর লম্ব করে উপরে একটি পাথর দিয়ে এটি নির্মাণ করা হতো। অন্যটি ছিল দরজা ওয়ালা পাথরের তৈরি সমাধি। তবে তখনও কিছু অঞ্চলের মানুষেরা সমাধির ব্যবহার জানতো না।

পাথরের সমাধি ছাড়াও দক্ষিণ-পশ্চিম স্কটল্যান্ড ও উত্তর আয়ারল্যান্ডে শিলা স্তুপ বিশিষ্ট সমাধির সন্ধান পাওয়া গেছে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ কুঠিরের মতো সমাধি দেখতে পাওয়া গেছে পশ্চিম ইংল্যান্ডে। আবার স্টেডিয়ামের গ্যালারির মতো আকৃতির সমাধির সন্ধান পাওয়া গেছে ফ্রান্সে। এসব সমাধির আশে পাশে মৃতের হাড়গোড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায়। প্রত্নতত্ত্ববিদরা উত্তর এশিয়ার পাথর যুগের সমাধির সাথে উত্তর চীনের সমাধির মিল খুঁজে পেয়েছেন। কালক্রমে ভৌগোলিক কারণে কোরিয়ান পাথর যুগের সমাধি সহজে চিহ্নিত করা যায়। কারণ উত্তর কোরিয়ার সমাধির তুলনায় দক্ষিণ কোরিয়ার সমাধিগুলো ছিল ছোট। কোরিয়ায় ১৫ হাজার থেকে ১ লক্ষ দক্ষিণী রীতির সমাধি আছে বলে প্রত্নতত্ত্ববিদরা মনে করেন।

শেষকথায় বলা যায়, মৃত মানুষ সমাহিত করার জন্য সমাধির নিয়ম প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে প্রচলিত ছিল। বর্তমান সময়েও লাশ পুড়িয়ে ফেলা বা ভাসিয়ে দেওয়ার নিয়ম অনেক দেশে প্রচলিত থাকলেও সার্বিকভাবে মৃত ব্যক্তিকে সমাহিত করার নিয়মটি বেশী প্রচলিত আছে। তবে এখনও সেটির নিয়ম দেশ ও ধর্ম ভেদে আলাদা।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.