Header Ads

অপরূপ সৌন্দর্যের ব্লাক ফরেস্ট

পৃথিবী জুড়ে রয়েছে শত শত বন। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বনটির নাম আমাজান, যেটি আফ্রিকায় অবস্থিত। আবার পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনের নাম সুন্দরবন, যেটি বাংলাদেশে অবস্থিত। কিন্তু আপনারা কি কালো বন নামের কোনও বনের সাথে পরিচিত আছেন? আমরা সবাই জানি বন সাধারণত হাজারো সবুজ গাছের সমারোহের কারণে সবুজ হয়ে থাকে। সেজন্য বনের নাম সবুজ বন রাখা যুক্তিযুক্ত, কিন্তু সবুজ নয় কালো বন নামেই একটি বন আছে আমাদের এই পৃথিবীতে।

যে বনটি জার্মানিতে অবস্থিত। হয়তো আপনার ভাবছেন এই বনটিতে খারাপ কিছু আছে সেজন্য এই বনের নাম রাখা হয়েছে কালো বন। কিন্তু না, জার্মানির দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত পর্বতময় এই বনভূমির নাম ব্লাক ফরেস্ট বা কালো বন রাখা হয়েছে এই বনের অপরূপ সৌন্দর্যের কারণে। পাহাড় ও বন একসাথে মিশে এখানে তৈরি করেছে এক অনাবিল পরিবেশের। লম্বা লম্বা গাছ আর উঁচু উঁচু পাহাড়ের কারণে এই বনটি ব্লাক ফরেস্ট নামে পরিচিতি পেয়েছে। বনটি মোট ১৫০ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে বেষ্টিত। 

এখানকার সর্বোচ্চ পর্বতের চূড়া ফেন্ডবাগরাউর উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৪৯৩ মিটার উঁচুতে। এই বনের গা ঘেষে থাকা বৃহৎ আকারের পর্বতগুলো মূলত বেলে পাথরের তৈরি। পর্বতগুলোর মধ্যে অন্যতম আরও কয়েকটি হচ্ছে হেরজোজেনহর্ন (১৪১৫ মিটার), বেলচিন (১৪১৪ মিটার), স্কাউইন্সল্যান্ড (১২৮৪ মিটার), ক্যানডেল (১২৪১ মিটার), হোচব্লাউইন (১১৬৫ মিটার), হরনিসগ্রিন্ড (১১৬৪ মিটার)।

ব্লাক ফরেস্টের রয়েছে এক দীর্ঘ ইতিহাস। শেষ বরফ যুগের সময় বর্তমান ব্লাক ফরেস্ট সেই সময় তুষার আচ্ছাদিত ছিল। পরে এই বরফ হিমবাহ আকারে নেমে এসে তৈরি করেছে অপরূপ সৌন্দর্যের কয়েকটি নদী। যেগুলোর মধ্যে অন্যতম দানিয়ুব, দি ইনজ, দি কিনজিগ, দি মুরগ, দি নেগোল্ড, রেন্চ। এই বনের মূল বৃক্ষগুলোর মধ্যে রয়েছে পাইন ও দেবদারু জাতীয় গাছ। এই বনের গাছগুলোর ডালপালা কম এবং পাতা সুরু সুচালো। ব্লাক ফরেস্ট আফ্রিকার বনের মতো ঘন ও নিবিড় নয়। গাছ গুলো একটু সাজানো-গুছানো ও পরিপাটি। এই সুন্দর বনটি বার বার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মানুষ ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে। 

এক সময় মানুষের নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন বনটিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছিল। বনটি বার বাক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আকাশ থেকে এসিড বৃষ্টি বর্ষিত হবার কারণে। বনটি সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ১৯৯৯ সালে এই এলাকায় সংঘটিত ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের কারণে। এই ঝড়ে অন্তত ১০০ একর বনভূমি চুরমার হয়ে গিয়েছিল।

ব্লাক ফরেস্ট জার্মানির একটি পর্যটন এলাকা। প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক বিভিন্ন দেশ থেকে এই কালো বন পরিদর্শনে আসে। পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্য বর্তমানে ব্লাক ফরেস্টকে অপরূপ সুন্দর, আকর্ষণীয়শৈল্পিক ভাবে সাজানো হয়েছে। বর্তমানে বনের মধ্য দিয়ে চলে গেছে ইউরোপিয়ান হাইওয়ে। বনের মাঝে তৈরি করা হয়েছে অনেক দীর্ঘ ফুটপাত। ফলে পর্যটকরা অনায়াসেই বনের মধ্যে ঘুরতে পারেন। বনের সাথে মিশে থাকা পাহাড় গুলোয় তৈরি করা হয়েছে সাইক্লিংয়ের ব্যবস্থা। ইচ্ছা করলে আপনি ব্লাক ফরেস্টে করতে পারেন পাহাড় অভিযান। এখানে আছে সেই রোমাঞ্চকর পাহাড় অভিযানের সুযোগ। দিনের বেলায় গাছের ছায়ায় হাটার জন্য বনের মধ্যে আছে ছোট ছোট রাস্তা।

সবচেয়ে আকর্ষণের বিষয় এই যে, এই বনে প্রায় ২৩ হাজার কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তৈরি করা হয়েছে পর্যটন নেটওয়ার্ক। যা পর্যটকদের বনের মধ্যে সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা প্রদান করে। এই পর্যটন নেটওয়ার্ককে পরিচালনার জন্য সেখানে রয়েছে প্রচুর লোকবল ও পর্যটন ব্লাক ফরেস্ট সোসাইটি নামে একটি সংগঠন। আপনি শুনলে অবাক হবেন, বর্তমানে এই সংগঠনের সদস্য সংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ। এই বনে আছে অনেক সুন্দর সুন্দর লেক এবং মনোরম ঝরনা। লেকগুলোতে দেখতে পাবেন সবুজের মাঝে স্নিগ্ধ পানির উপর পাথর ছড়িয়ে থাকার অপরূপ সৌন্দর্য। পাহাড়ের চূড়া থেকে গা বেয়ে নেমে আসা ঝরনার দৃশ্য দেখলে যে কেউ পাগল হয়ে যাবে। 

বনের মধ্যে সবুজ বেষ্টনীর মাঝে তৈরি করা হয়েছে নয়নাভিরাম বিভিন্ন কটেজ। যেখানে পর্যটকরা অবস্থান করতে পারে। এই বনে আছে সুন্দর কয়েকটি জলপ্রপাত। যার মধ্যে একটি অন্যতম জলপ্রপাতের নাম ট্রিবার্গ। জলপ্রপাতটি খুব উঁচু না হলেও এটি জার্মানির একটি বিখ্যাত জলপ্রপাত। জলপ্রপাতটি পর্যটকদের দারুণভাবে মুগ্ধ করে। ব্লাক ফরেস্টের মধ্যে আছে একটি যাদুঘর, যেখানে দেখানো হয়েছে ১৬ ও ১৭ শতকের জার্মান কৃষকদের জীবন। ঘড়ির ইতিহাস নিয়ে ব্লাক ফরেস্টে আছে একটি ঘড়ি যাদুঘর।

বনে সাধারণত থাকে বিভিন্ন জীবজন্তু ও হিংস্র প্রাণী, কিন্তু ব্যতিক্রমী এই যে, এই বনে কোনও হিংস্র প্রাণী নেই। এই বনের বন্য জীবের মধ্যে রয়েছে গরু, উট, ছাগল, ভেড়া, ঈগল, পেঁচা, অস্ট্রিচ পাখি ইত্যাদি। এই বনে খুব বড় আকারের কেঁচো ও শিয়াল দেখতে পাওয়া যায়। শিয়ালগুলো এতই বড় আকৃতির যে সেগুলো ঘোড়ার সমান বড়। অতীতে এই এলাকার লোকেরা এই শিয়াল দিয়ে বোঝা বহন করাতো। ব্লাক ফরেস্ট এলাকায় রয়েছে একটি বিশেষ ছুটির দিন। যেদিন সবাই দল বেধে রাস্তায় নেমে আসে এবং আদিবাসীদের মুখোশ পরে আনন্দ উল্লাস করে।

৩টি মন্তব্য:

  1. ভাই, আমার ব্লগের নামও "রকমারি" অ্যাড হল rokomari.blogspot.com যাক!! একই নামের আরেকজন পেলাম। আমার লিঙ্কটা দেখবেন আশা করি।

    উত্তরমুছুন
  2. আপনাদেরকেও অনেক ধন্যবাদ। এই সাইটটি আপনাদের ভাল লেগে থাকলে অন্যকে শেয়ার করুন।

    উত্তরমুছুন

Blogger দ্বারা পরিচালিত.