Header Ads

বয়কট প্রথার সূচনা যেভাবে ...

প্রতিবাদ মানুষের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য। অন্যায়, অবিচার ও নির্যাতনের প্রতিবাদ করা প্রত্যেক মানুষের মৌলিক অধিকার। তবে এই প্রতিবাদের ভাষা বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে প্রত্যেক দেশে যে প্রক্রিয়াটির প্রচলন রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে বয়কট। বয়কট শব্দ দ্বারা মূলত বর্জন করাকে বোঝায়। প্রতিবাদ হিসেবে অনেকে ভাষা বর্জন করে, অনেকে খাদ্য বর্জন করে আবার অনেকে পোশাক বর্জন করে। বয়কট নামক এই ব্যবস্থাটির প্রচলন বর্তমানে সমগ্র বিশ্বে থাকলেও এর সূচনা হয়েছিল এক মজার ঘটনার দ্বারা।

বয়কট শব্দটির উদ্ভব হয়েছে চার্লস কার্নিংহাম বয়কট নামক এক আইরিশ ব্যক্তির নাম থেকে। তিনি পেশায় ছিলেন একজন সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন। এক যুদ্ধ শেষে তিনি বিয়ে সম্পন্ন করে তার সেনাবাহিনীর চাকুরী ছেড়ে দেন। চাকরী ছাড়ার পর তিনি আয়াল্যান্ডের মেয়ো কাউন্ট্রিতে তৃতীয় অল অব আনরাউর এক ষ্টেটের ম্যানেজার হিসেবে কাজে যোগদান করেন। তার কাজ ছিল সেখানকার বর্গা চাষিদের কাছ থেকে জমির ভাড়া নিয়মিত আদায় করা। তিনি যে সময় কাজে যোগদান করেন সে সময় দেশটিতে জমির বণ্টন ব্যবস্থা নিয়ে দারুণ গোলযোগ চলছিল। 

সেখানের চাষিরা তখন আন্দোলন করছিল কয়েকটি দাবী আদায়ের জন্য। যার মধ্যে ছিল- ন্যায্য ভাড়া, বর্গা না বদলানো এবং ফসল বিক্রির ক্ষেত্রে স্বাধীনতা দেয়া। ১৮৭০ সেখানে আইন পাশ করা হয় যে, বর্গা চাষিরা উপযুক্ত দাম দিয়ে জমির মালিকও হতে পারবে। কিন্তু বয়কট যখন দায়িত্ব নিয়ে সেখানে আসেন তখন চাষাবাদের অবস্থা ছিল খুবই নাজুকএমনকি কিছু কিছু এলাকায় দেখা দিয়েছিল দুর্ভিক্ষ১৮৮০ সালে পার্লামেন্ট মেম্বার জনপ্রিয় নেতা চার্লস পারনেলের নেতৃত্বে গঠন করা হয় আইরিশ ন্যাশনাল ল্যান্ড লীগ। তিনি আমেরিকা থেকে আইরিশদের জন্য সাহায্য বহন করে নিয়ে এসেছিলেন।

দেশে ফেরার পর তিনি ঘোষণা দেন যে, যদি কোন বর্গা চাষি এমন কোন জমিতে কাজ নেয় যেখান থেকে তার আরেক বর্গা চাষি ভাই উৎখাত হয়ে গেছে তবে তাকে সামাজিক ভাবে একঘরে করে ফেলা হবে এবং জমির মালিক যদি বর্গা চাষিদের নির্ধারিত রেটে জমি বর্গা দিতে রাজি না হন তবে তাকেও সামাজিক ভাবে একঘরে করা হবে। পারলেনের জারি কৃত নতুন এই আইনের প্রথম শিকার হন কানিংহাম বয়কট। 

বর্গা চাষিরা দলে দলে বয়কটের নিকটে এসে জমির মূল্য কমানোর আবেদন করেন কিন্তু তিনি তা করতে না পেরে বরং উল্টো চাষিদের বরখাস্ত করেন। তার এই নতুন সিদ্ধান্তে চাষিরা প্রচণ্ড ভাবে ক্ষেপে যান। তারা ঠিক করেন এমন সিদ্ধান্তের জন্য তারা বয়কটকে উচিত শিক্ষা দিবেন। চাষিদের ক্ষেপানোর ফলে তারপরই বয়কটের জীবনে নেমে আসে বিভীষিকা। সকল চাষিরা এবং তার কর্মচারীরা সবাই বয়কটকে ত্যাগ করে চলে যায়। 

ফলে জমি থেকে ফসল তোলার মতে আর কোন লোকই অবশিষ্ট থাকে না। চাষিরা সকল মানুষকে বয়কটের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলে এবং তাকে সম্পূর্ণ ভাবে একঘরে করে ফেলে। তার সাথে কেউ কথা বলতো না, তার সাথে কেউ মিশতো না, বাজরে গেলেও তার কাছে কেউ কিছু বিক্রয় করতো না এমন কি ডাক পিয়নও তার চিঠি বিলি করতো না

শেষমেশ কোন উপায় না পেয়ে বয়কট ব্রিটিশ সৈন্যদের পাহারায় ৫০ জন কৃষক এনে ফসল তোলার কাজ সে বছরের মতো শেষ করেন। কিন্তু পরের ছর আবার একই অবস্থার তৈরি হলে নিরুপায় হয়ে তিনি আয়ারল্যান্ড ত্যাগ করেন। কিন্তু ততক্ষণে বয়কটের নাম নিয়ে আশে-পাশের এলাকায় শুরু হয়ে যায় এক ঘরে করার নতুন নামের প্রচলন। 

কাউকে একঘরে করার জন্য বা কাজ পরিত্যাগ করার জন্য তারা কানিংহাম বয়কটের নাম অনুসারে নতুন নামের প্রচলন করে, আর যাকে বলা হতো বয়কট। সেই যে বয়কট শব্দটির প্রচলন শুরু হয়েছিল তারপর সেটির প্রচার-প্রসার বাড়তে বাড়তে বিশ্বব্যাপী এখন বয়কট শব্দটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়।

২টি মন্তব্য:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.