Header Ads

দিল্লীর রহস্যময় লোহার পিলার !

কথায় বলা হয় সারা বিশ্বে যা আছে ভারতে তাই আছে। ভারত তথা ভারতীয় উপমহাদেশ সৌন্দর্য, সম্পদ, পরিবেশ, আবহাওয়া ইত্যাদি দিক থেকে অনন্য। সমগ্র ভারত জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য প্রত্নতাত্নিক সম্পদ ও স্থাপনা। মূলত মুসলিম রাজা-বাদশাহদের বসবাসের কারণে ভারত নানা দিক থেকে সম্পদশালী হয়েছে। ভারতে অনেক স্থাপনা আছে যেগুলো বিস্ময়কর, দৃষ্টি নন্দন ও রহস্যময়। আর তেমনই একটি রহস্যময় নিদর্শন হচ্ছে দিল্লীর লোহার পিলার

ভারতের রাজধানী দিল্লীর কুতুব মিনার কমপ্লেক্সে অবস্থিত রহস্যময় এই লোহার পিলারটি। ১৬০০ বছরের পুরাতন এই পিলারটি পরিপূর্ণ খাটি লোহায় তৈরি। যার উচ্চতা ২৩ ফুট ৮ ইঞ্চি বা ৭.২১ মিটার। পিলারের গোঁড়ার দিকে ব্যাস ৩ ফুট ৮ ইঞ্চি, সরু মাথার মাপ ২৯ সেন্টিমিটার এবং পিলারটির মোট ওজন ৬ টন।

রহস্যময় লোহার এই পিলারটি ঠিক কিভাবে তৈরি হয়েছিল বা পিলারটির কিভাবে উদ্ভব হয়েছিল সে বিষয়ে সঠিক কোনও তথ্য জানা যায় না। তাই এটি ভারতীয় সহ বিশ্ববাসীর কাছে এক রহস্য। প্রতি বছর দেশী-বিদেশী হাজার হাজার দর্শনার্থী ও পর্যটক এই পিলারটি দেখতে আগমন করে থাকে।

গবেষকরা ধারনা করেন পিলারটি চতুর্থ বা পঞ্চম শতাব্দীর দিকে স্থাপন করা হয়। প্রায় ১৬০০ বছরের মতো সময় অতিবাহিত হলেও পিলারটির গঠনশৈলী এতটুকু বিকৃত হয়নি। পিলারটি এমন এক সুচারু প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয়েছে যে, আজও এতে কোনও মরিচা ধরেনি কিংবা ক্ষয় হয়নি। পিলারটি নির্মাণের সময় বিশেষ প্রক্রিয়ায় চাপ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এবং এতে ব্যবহার করা হয়েছে শতকরা ৯৮ ভাগ খাঁটি লোহা।


প্রত্নতত্ত্ববিদদের একটি অংশের ধারণা, হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর পতাকা খোদিত এ পিলারটি খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকে ( ৩৭৫খ্রিঃ-৪১৪ খ্রিঃ) তৈরি হয়েছে। আর এটি
তৈরি করেন গুপ্ত বংশীয় রাজা দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত। কোনও মন্দির নির্মাণে বা মন্দির চত্বরে স্থাপনের জন্যই পিলারটি তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু এটি কিভাবে বর্তমান স্থানে এলো তার কোনও সঠিক ইতিহাস কারও নেই। আবার কেউ কেউ ধারণা করেন, কুতুব-উদ্দিন আইবেক মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য এটি কোনও মন্দির থেকে নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তারও কোনও দালিলিক প্রমাণ নেই। 

লোককাহিনী মতে, পিলারটি অলৌকিকভাবেই কুতুব কমপ্লেক্সে চলে এসেছে, কেউ এটিকে এখানে নিয়ে আসেনি। আবার অনেকের মতে অদৃশ্য শক্তিতে পিলারটি এখানে আসার পরে এই পিলারকে কেন্দ্র করে কুতুব-উদ-দীন কুতুব কমপ্লেক্স নির্মাণ করেন । ভারতের অনেক ঐতিহাসিক বলেন, পিলারটি এখানে আসার পূর্বে পিলারটিকে অন্য অনেক জায়গায় দেখা গেছে। ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির গবেষকরা বলেন, গুপ্ত সাম্রাজ্যের রাজা কুমারা গুপ্ত এটি তৈরি করেন। আর এটি নির্মাণের সময়কাল ছিল ৩২০-৫৪০ খ্রিস্টাব্দে। এই পিলারের গায়ে খোদায় করা অবস্থায় একটি ফলকে এর ইতিহাস লেখা আছে। কিন্তু লেখাগুলি কেউ অনুবাদ করতে পারছিলেন না।

পরিশেষে ১৮৩৮ সালে জেমস প্রিনচিপ নামক এক ভারতীয় ব্যক্তি এই লেখাগুলো ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। সেই তথ্য মতে, এই পিলারটির নির্মাতা চন্দ্রগুপ্ত বিক্রমাদিত্য। ৩৭৫খ্রিঃ-৪১৪ খ্রিঃ মধ্যে তিনি এটি নির্মাণ করেন। নির্মাণের পর এটি বিষ্ঞুপাদাগিরিতে সর্বপ্রথম স্থাপন করা হয়। গুপ্ত বংশের শাসনের সময় এখানে জ্যোতির্বিদ্যা শিক্ষা দেয়া হতো। সেখানে এই পিলারের ছায়া দ্বারা শিক্ষা প্রদান করা হতো জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ের।

রহস্যময় পিলারটি দেখতে এসে পর্যটকরা এর গায়ে হেলান দিয়ে বা একে জড়িয়ে ধরে ছবি তুলে থাকে। অনেকে আবার এটির গোঁড়ায় এসে বন্ধুত্ব তৈরি করে। বিশেষ করে অনেক হিন্দু এটিকে উপাসনা করে থাকে। তবে সাধারণভাবে এটি দেশী-বিদেশী সকল মানুষদের কাছে দৃষ্টিনন্দন একটি স্থাপনা এবং ঐতিহাসিক একটি স্থান।

৩টি মন্তব্য:

  1. এই লোহার পিলার তুলে সুরঞ্জিত সেন গুপ্তকে পিটানো উচিত।

    উত্তরমুছুন
  2. Onek shanti pailam Akasher uktiti pore !!!! Akash'k shera uktiti korar jonno prize dewa uchit. Amar pokkho theke shudhu aituku bolbo - Vai apni jug jug beche thaken.

    উত্তরমুছুন

Blogger দ্বারা পরিচালিত.