Header Ads

স্রষ্টার নিদর্শন যমযম কূপের রহস্য

বিশ্ব জগতে মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন তার স্বীয় অস্তিত্বের প্রমাণ স্বরূপ অনেক নিদর্শন সৃষ্টি করেছেন। পৃথিবীতে প্রেরিত তার নবী ও রসূলদের দ্বারা তিনি এই নিদর্শন সমূহের প্রকাশ ঘটিয়েছেন। এই সকল অলৌকিক নিদর্শন ও বিস্ময়কর সৃষ্টিগুলো দ্বারা বিশ্বাসীরা আরও বেশী আস্তিক হয় এবং নাস্তিকেরা সুপথের সন্ধান লাভ করে। মহান স্রষ্টার এই সকল নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যমযম কুপ। যে কুপের পানি সৃষ্টি থেকে আজ পর্যন্ত এক মুহূর্তের জন্যেও নিঃশেষ হয় নি বা শুকিয়ে যায় নি।

যমযম কূপ বিশ্বের এক অনন্য নিদর্শন। সৌদি আরবের মক্কা কাবা শরীফ থেকে ২০ মিটার বা ৬৬ ফুট পশ্চিমে মসজিদুল হারামের ভিতরে এই কূপের অবস্থান। মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি একটি পবিত্র স্থান। মুসলমানরা বিশ্বাস করেন, যমযম কূপের সুপেয় পানি মহান আল্লাহর দান। যেটির সূচনা হয়েছিল কয়েক হাজার বছর পূর্বে হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর সময়ে। হজ্জ্ব ও ওমরাহ পালনের সময় সহ বছরের বিভিন্ন সময়ে কোটি কোটি মুসলমান এই কূপটি দর্শনে আসে এবং ইহার পানি পান করে তৃপ্তি সহকারে। এখানে যারা আসে তারা কূপের পানি সংগ্রহ করে স্ব স্ব দেশে নিয়ে যায় এবং পরিবারবর্গদের মাঝে বণ্টন করে থাকে। বিশ্বের সকল পানি বসে পান করা সুন্নত তবে একমাত্র ব্যতিক্রম যমযমের পানি। কারণ, যমযমের পানি দাড়িয়ে পান করা সুন্নত।

ইতিহাস অনুযায়ী হযরত ইবরাহীম (আঃ) তার দ্বিতীয় স্ত্রী হযরত হাযেরা (রাঃ) কে দুগ্ধপোষ্য শিশু হযরত ইসমাঈল (আঃ) সহ আরবের মরু অঞ্চলে নির্বাসিত করেছিল। সেখানে থাকাকালে শিশু ইসমাঈল (আঃ) পানির তৃষ্ঞায় পিপাসিত হলে হযরত হাজেরা পানির  সন্ধানে উত্তপ্ত বালুকাময় মরুভূমিতে সাফা মারওয়া নামক স্থানে সাতবার দৌড়া-দৌড়ী করেছিল। অপরদিকে আল্লাহর নবী শিশু ইসমাঈল (আঃ) পানির তৃষ্ঞায় তার পায়ের গোড়ালি দিয়ে মাটিতে আঘাত করতেছিল। 

র এই আঘাতেই মহান আল্লাহর কুদরতে সেখানে হঠাৎ মাটির ভিতর থেকে পানি উঠতে শুরু করে এবং ধীরে ধীরে একটি সুপেয় পানির কূপে পরিণত হয়। আর সেটিই যমযম কূপ। অন্য বর্ণনা মতে শিশু ইসমাঈল (আঃ) এর কান্না দেখে মহান আল্লাহ তার ফেরেশতা হযরত জিবরাঈল (আঃ) কে সেখানে প্রেরণ করেন। জিবরাঈল সেখানে এসে তার পায়ের আঘাতে একটি পানির ঝরনার সৃষ্টি করেন।

যমযম (Zamzam) শব্দটি ঐতিহ্যগতভাবে শব্দ সমষ্টি Zomë Zomë  থেকে এসেছে। যার শাব্দিক অর্থ থামা। এই কূপের গা ঘেঁষে হযরত ইবরাহীম (আঃ) পুনরায় বায়তুল্লাহ নির্মাণ করেন। হিব্রু ভাষায় যাকে বলা হয় ব্যাথেল। বায়তুল্লাহ বা ব্যাথেল সর্বপ্রথম নির্মাণ করেন বিশ্বের প্রথম মানব হযরত আদম (আঃ)। এই গৃহের বর্তমান নাম কাবা। যেদিকে মুখ করে মুসলমানরা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে।

ইসলামের ইতিহাস অনুযায়ী এই কূপের ছিল দুটি জলাধার, একটি হচ্ছে খাওয়ার জন্য এবং অপরটি ওজু করার জন্য। প্রথম পর্যায়ে এটি পাথর দ্বারা বেষ্টিত একটি কূপ ছিল। ৭৭১ খ্রিষ্টাব্দে আব্বাসীয় খলিফা আল মুনসুর এই কূপকে কেন্দ্র করে মার্বেল পাথরের একটি গম্বুজ নির্মাণ করেন। ৭৭৫ খ্রিষ্টাব্দে খলিফা আল মাহদি যমযম কূপের পুনরায় সংস্কার করেন। তিনি সেগুন কাঠ দিয়ে একটি গম্বুজ নির্মাণ করেন, যেটি মোজাইক করা অংশ আবৃত করেছিল। তখন গম্বুজের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল দুটি। ছোটটি ছিল কূপের জন্য এবং বড়টি ছিল দর্শনার্থীদের জন্য। 

৮৩৫ খ্রিষ্টাব্দে খলিফা আল মুতাসিম এর সময়ে গম্বুজ মার্বেল পাথর দ্বারা নির্মাণ করা হয়। ১৪১৭ সালে মামলুকদের সময়ে মসজিদটি আগুনে পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়। ১৪৩০ ও ১৪৯৯ সালে খলিফা আল কুয়েতবে এর সময়ে এটি পুনরায় নির্মাণ করা হয়। যমযম কূপকে আধুনিকায়ন করা হয় ১৯১৫ সালে অটোমান সুলতান আব্দুল হামিদের সময়ে। তিনি যমযম কূপের নিকট হতে সমগ্র গৃহকে সরিয়ে তাওয়াফ করার স্থানের বাইরে নিয়ে যান। বর্তমানে এই কূপের পানি ঝরনার সাহায্যে মসজিদের পশ্চিম অংশে স্প্রে করা হয়।

যমযম কূপটি ৩০ মিটার বা ৯৮ ফুট গভীর, যার ব্যাস ৩ ফুট ৭ ইঞ্চি থেকে ৮ ফুট ৯ ইঞ্চি। প্রথম দিকে এই কূপ থেকে পানি তোলা হতো দড়ি বা বালতীর সাহায্যে। বর্তমানে এই কূপের একটি নিজস্ব ঘর আছে সেখান থেকে বৈদ্যুতিক পাম্পের সাহায্যে কূপ থেকে পানি তুলে মসজিদ আল হারামের তাওয়াফ করার সমগ্র এলাকায় বিতরণ করা হয়। কূপের উপরের অর্ধেক উপত্যকার পলল বালুকাময়, সর্ব উপরের ১ মিটার কংক্রিটের এবং নিচের অংশ জমাট শিলা দ্বারা তৈরি। বিজ্ঞানীরা বলেন, এই কুপে পানি এসে থাকে ওয়াদি ইব্রাহিমে বৃষ্টিপাত শোষণের মাধ্যমে। 

তবে শুষ্ক মরু সৌদি আরবে এত পানি প্রকৃতই কিভাবে আসে সেটা আল্লাহর এক নিদর্শন। কারণ, সমগ্র আরব শুকিয়ে গেলেও যমযম কুপ সৃষ্টির পর থেকে আজ পর্যন্ত এক মুহূর্তের জন্যেও এর পানি নিঃশেষ হয় নি বা শুকিয়ে যায় নি। । সৌদি আরবের ভূতাত্ত্বিক জরিপ বোর্ডের যমযম কূপের উপর একটি গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে। তারা যমযম কূপে পানির স্তর, তাপমাত্রা এবং অন্যান্য উপাদান পরীক্ষা করে থাকে এবং নিয়মিত ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য পরিবেশন করে থাকে। যমযম কূপের তলে পানির স্তর ১০.৬ ফুট। একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে প্রতি সেকেন্ডে ৮০০০ লিটার পানি পাম্প করে উঠিয়ে নিয়ে পানির স্তর ৪৩.৯ ফুট পূর্ণ করলেও পাম্প থামানোর ১১ মিনিটের মধ্যে এটি আবার তার পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায়।

যমযম কূপের পানির কোনও রং বা গন্ধ নেই, তবে এর বিশেষ একটি স্বাদ রয়েছে। কিং সৌদ বিশ্ববিদ্যালয় যমযম কূপের পানি পরীক্ষা করেছে এবং তারা এর পুষ্টি গুন ও উপাদান সমূহ নির্ণয় করেছে। যমযম পানির উপাদান সমূহ: সোডিয়াম-১৩৩ মিলি, ক্যালসিয়াম-৯৬ মিলি, ম্যাগনেসিয়াম-৩৮.৮৮ মিলি, পটাশিয়াম-৪৩.৩ মিলি, বিকারবোনেট-১৯৫.৪ মিলি, ক্লোরাইড-১৬৩.৩ মিলি, ফ্লোরাইড-০.৭২ মিলি, নাইট্রেট-১২৪.৮ মিলি, সালফেট-১২৪ মিলিগ্রাম প্রতি লিটারে।

২০১১ সালের মে মাসে বিবিসি লন্ডন এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল যমযম পানিতে প্রচুর পরিমাণে আর্সেনিক রয়েছে। এই পানি খাওয়া মানুষের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। দীর্ঘ দিন এই পানি কেউ পান করলে খুব দ্রুতই সে ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারে কিন্তু ফ্রান্স ও সৌদি আরবের যৌথ পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সূত্র মতে মানুষের শরীরের জন্য যে পরিমাণ আর্সেনিক ক্ষতিকর যমযমের পানিতে তার চেয়ে অনেক কম পরিমাণ আর্সেনিক রয়েছে। আর এই পরিমাণ আর্সেনিক যুক্ত পানি পান করা স্বাস্থ্যের জন্য কোনও ক্ষতিকর নয়। তাই মানুষ এই পানি নিশ্চিন্তে পান করতে পারে।

যমযমের পানি বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের কাছে একটি পবিত্র পানি। মুসলমানরা এই পানি ভক্তিভরে পান করে থাকে। রসূল মোহাম্মদ (সাঃ) নিজেও এই পানি পান করেছিলেন। সুতরাং একথা নিশ্চিন্তে বলা যায় যে, যমযমের পানি পান করা বরকতময়।

৩টি মন্তব্য:

  1. যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সর্বদা ইসলাম বিরোধী ও মুসলমান বিরোধী কাজ করে থাকে। তারা যমযম পানি সম্পর্কে মিথ্যা রিপোর্ট প্রদান করেছে যাতে কেউ যমযমের পানি পান না করে এবং সবাই যেন আল্লাহর কুদরতকে অবিশ্বাস করে। যাইহোক ধন্যবাদ ফ্রান্স ও সৌদি আরবকে, কারণ তারা সত্য ও সঠিক রিপোর্ট প্রদান করতে পেরেছে। আল্লাহু আকবর।

    উত্তরমুছুন
  2. জাভেদ আপনার কথা সঠিক। তারা ইসলামের অলৌকিকত্বগুলো অস্বীকার করতে চায়। সত্য প্রকাশ হওয়ার কারণে মহান আল্লাহকে ধন্যবাদ।

    উত্তরমুছুন
  3. ভাল লাগছে আপনার পুরো ওয়েবসাইট টা ।

    উত্তরমুছুন

Blogger দ্বারা পরিচালিত.