Header Ads

রেকর্ডময় মহাগ্রন্থ আল কুরআন যত রেকর্ড

মানবতার মুক্তির দূত মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর উপর মহান আল্লাহ তায়ালা নাজিল করেছেন মহা গ্রন্থ আল কুরআন। মানব জাতির সংবিধান এই আল কুরআন মানুষের সত্য ও সঠিক পথে চলার একমাত্র দিশারী। প্রতিবছর আল কুরআনকে নিয়ে বিশ্বব্যাপী চলে অনেক ব্যাখ্যা ও গবেষণা। আবার এই আল কুরআনকে নিয়ে বিশ্বব্যাপী রয়েছে বিভিন্ন রেকর্ডও। সেই রেকর্ডগুলোর মধ্য থেকে আমরা আজ কিছু রেকর্ড সম্পর্কে জানবো

বিশ্বের বৃহত্তম কোরআন শরিফ:


যুদ্ধে যুদ্ধে কেটে গেছে আফগানিস্তানের ৩০টি বছর। কিন্তু এই ৩০ বছরে দেশটি যে নিজেদের শৈল্পিক কৃষ্টি ও সংস্কৃতির উত্তরাধিকারকে ভুলে যায়নি তা প্রমাণ করতেই যেন আফগানরা পাঁচ বছরের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তৈরি করেছে বিশ্বের বৃহত্তম কোরআন শরিফ। ১০০০ পাউন্ড ওজনের এই কোরআন শরিফটির দৈর্ঘ্য ৭ দশমিক ৫ ফুট ও প্রস্থ ৫ দশমিক ১০ ফুট, যার পৃষ্ঠা সংখ্যা ২১৮টি। আফগান সরকারের হজ ও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে তৈরি হওয়া এই কোরআন শরিফটির প্রচ্ছদে ব্যবহার করা হয়েছে ২১টি গবাদিপশুর চামড়া। 

দামি চামড়ার তৈরি প্রতিটি পৃষ্ঠায় অপরূপ সোনালি ক্যালিগ্রাফিতে বিবৃত হয়েছে এর কালাম। পৃথিবীর বৃহত্তম এই কোরআন শরিফ তৈরি করতে আফগানিস্তানের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে ব্যয় করতে হয়েছে তিন লাখ পাউন্ড। ২০০৯ সালে শুরু করে ২০১২ সালের প্রথমদিকে কাজ শেষ হওয়া পৃথিবীর বৃহত্তম এই কোরআন শরিফটি বর্তমানে রক্ষিত আছে রাজধানী কাবুলের সংস্কৃতি কেন্দ্রে। মোহাম্মদ সাবির খেদরি নামের এক ক্যালিগ্রাফারের অধীনে জন ছাত্র দিনরাত অক্লান্ত খেটেছেন এটি তৈরি করার জন্য। আফগানদের হাতে তৈরি পৃথিবীর বৃহত্তম কোরআন শরিফ যেন জানান দিচ্ছে ইসলামের প্রতি তাদের ভালোবাসা ও যুদ্ধের অভিশাপ থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর অপার ইচ্ছা শক্তির।

আফগানিস্তানের আগে পৃথিবীর বৃহত্তম কোরআন শরিফ তৈরি হয়েছিল রাশিয়ার তাতারস্তানে। ৮০০ কেজি ওজনের ৬৩২ পৃষ্ঠা সংবলিত সেই কোরআন শরিফের দৈর্ঘ্য ছিল সাড়ে ফুটের একটু বেশি এবং প্রস্থ ছিল সাড়ে ফুট। প্রচ্ছদ তৈরি হয়েছিল সোনা ও মূল্যবান পাথরের গাঁথুনিতে। তাতারস্তানের সেই কোরআন শরিফটি তৈরি হতে সময় লেগেছিল পুরো একটি বছর। তবে সেটি তৈরি করতে কত খরচ পড়েছিল তা অবশ্য অজানাই রয়ে গেছে। সূত্র: দি গার্ডিয়ান

বিশ্বের দীর্ঘতম কোরআন শরিফ:


বাগদাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ২৫ বছর বয়সী টগবগে এক ছাত্র হোসেন আল খারসান। যার লক্ষ্য বিশ্বের দীর্ঘতম কোরআন শরিফ নিজ হাতে
লেখা। ২০১২ সালে এ বছর শুরু করা সাড়ে তিন মাইল দীর্ঘ এই কোরআন শরিফটি লিখতে খারসান ব্যবহার করছেন পাখির পালকের তুলি আর রং। ৫০৩ পৃষ্ঠার দীর্ঘতম কোরআন শরিফের প্রতি তিন পৃষ্ঠা খারসান লিখছেন এক দিনে। এভাবে কাজ চললে আগামী ছয় মাসে দীর্ঘতম কোরআন শরিফটির কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। তবে তার এই লেখার পিছনে বিরোধী হয়ে দাঁড়িয়েছে তার শরীর। কারণ উবু হয়ে বসে লিখতে লিখতে তার কোমর ও পিঠ ব্যথায় আক্রান্ত হয়েছে। 

যার ফলে বেশ কিছুদিন তাকে শয্যাশায়ীও থাকতে হয়েছে। তারপরও তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ খুব অল্প দিনের মধ্যেই পৃথিবীর দীর্ঘতম কোরআন শরিফ লিখে শেষ করার। নাজাফ শহরের একটি ইসলামি গবেষণাকেন্দ্রে বসে খারসান তাঁর কাজ করে যাচ্ছেন একনিষ্ঠ মনোযোগে। ইসলামের পবিত্র এই ধর্মগ্রন্থের দীর্ঘতম কপিটির কাজ শেষ হলে খারসানের ইচ্ছা গিনেস রেকর্ড বুকে নাম ওঠানোর। সে পথে হেঁটে অনেক দূরই এগিয়ে গেছেন এই ইরাকি যুবক। সূত্র: ডেইলি ডন


সবচেয়ে পুরাতন কোরআন শরিফ:



পৃথিবীর সবচেয়ে পুরাতন কোরআন শরীফ লেখা হয়েছিল ইসলামের তৃতীয় খলিফা হজরত উসমান (রাঃ)-এর সময়ে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মৃত্যুর ১৯ বছর পর খলিফা উসমান (রাঃ) কোরআনের সম্ভাব্য বিকৃতি রোধে
এর সব আয়াত সংকলনের প্রয়াস হাতে নেন। এ লক্ষ্যে তিনি কোরআন শিক্ষায় পণ্ডিত এমন ব্যক্তিদের নিয়ে একটি কমিশন গঠন করেন। সেই কমিশন একসঙ্গে কোরআন শরিফের পাঁচটি সংকলন তৈরি করে। সেই পাঁচটি সংকলন পাঠানো হয় খিলাফতের বিভিন্ন প্রান্তে। হজরত উসমান (রাঃ) নিজের ব্যবহারের জন্য মদিনায় একটি সংকলন রেখে দেন। 

পাঁচটি সংকলনের মধ্যে আরও একটি রক্ষিত ছিল বর্তমান তুরস্কের টোপকাপি প্রাসাদে। হজরত উসমানের মৃত্যুর পর ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রাঃ) মদিনায় রক্ষিত কোরআনের সেই কপিটি নিয়ে যান বর্তমান ইরাকের কুফায়। তৈমুর লং পরবর্তী সময় ইরাকে অভিযান চালিয়ে পুরো এলাকা ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত করেন। কোরআন শরিফের সেই কপিটি তৈমুর লং দখলি সম্পদ হিসেবে তাঁর রাজধানী তাসখন্দে নিয়ে যান। 

উজবেকিস্তানের তাসখন্দে কোরআনের সেই কপিটি রক্ষিত ছিল ১৮৬৮ সাল পর্যন্ত। রুশরা তাসখন্দ দখল করে নিলে কোরআনের সেই কপিটির পরবর্তীতে অবস্থান হয় রাশিয়ান ইমপেরিয়াল গ্রন্থাগারে। হজরত উসমান (রাঃ) এর কাছে থাকা কোরআনে কপিটির বর্তমান অবস্থান উজবেকিস্তানের তাসখন্দে অবস্থিত হাসত-ইমাম গ্রন্থাগারে। সূত্র: উইকিপিডিয়া


পৃথিবীর সবচেয়ে দামি কোরআন শরিফ:



১২০৩ সালে রমজান মাসে লেখা কোরআনের একটি কপি ২৩ অক্টোবর
২০০৭ সালে লন্ডনে নিলামে ওঠে। নিলামে এটি বিক্রি হয় রেকর্ড ২৩ লাখ মার্কিন ডলারে। একে নির্দ্বিধায় কোরআনের সবচেয়ে দামি কপি হিসেবে অভিহিত করা যেতে পারে। ইয়াহিয়া বিন মুহাম্মদ ইবনে উমর নামের এক ব্যক্তির স্বাক্ষর-সংবলিত কোরআনের এই কপিতে তারিখ দেওয়া আছে ৫৯৯ হিজরি সনের ১৭ রমজান। 
১৯০৪ সালে হিসপ্যানিক সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা আর্চার মিল্টন হটিংটন কায়রো থেকে ১৯০৫ সালে কোরআনের এই কপিটি সংগ্রহ করেন। পৃথিবীর সবচেয়ে দামি এই কোরআনের ক্যালিওগ্রাফি অত্যন্ত আকর্ষণীয়। কালো লাইনের ওপর সোনার হরফে এর আয়াতগুলো লেখা। প্রতিটি পৃষ্ঠায় বিভিন্ন আয়াতের যে ব্যাখ্যা দেওয়া আছে, সেগুলো রুপালি হরফে লেখা। সূত্র: এপি


বিশ্বের ক্ষুদ্রতম কোরআন শরিফ:



পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট কোরআনের কপিটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের এক নাগরিকের কাছে রক্ষিত আছে বলে কিছুদিন আগে খবর প্রকাশিত হয়েছে। প্রায়
৪০০ বছরের পুরাতন এই কোরআন শরিফ উচ্চতায় মাত্র ৫ দশমিক ১ সেমি এবং প্রস্থে ৮ সেন্টিমিটার। এতে পৃষ্ঠা আছে ৫৫০টি। পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট কোরআনের হেফাজতকারী আরব আমিরাতের সেই নাগরিক অবশ্য খ্রিষ্ট ধর্মের অনুসারী। আমিল ঈসা নামের সেই নাগরিক বংশ পরম্পরায় কোরআনের ক্ষুদ্রতম কপির মালিক হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, কোরআনের ক্ষুদ্রতম এই কপিটি পাওয়া গেছে জেরুজালেমে আল কুদসের কাছে। সূত্র: আল জাজিরা

বৃহত্তম কোরআন শিক্ষার বিদ্যালয়:


পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কোরআন শিক্ষার বৃহত্তম বিদ্যালয় তৈরির পরিকল্পনা করছে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান। দেশটির শিক্ষা বোর্ডের অধীনে রাজধানী তেহরানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে স্থাপিত হতে যাচ্ছে কোরআন শিক্ষার এই বৃহত্তম বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়টির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে। প্রায় ২২ হাজার বর্গমিটার জায়গা জুড়ে নির্মিত হচ্ছে পৃথিবীর বৃহত্তম কোরআন শিক্ষার এই বিদ্যালয়টি। সারা বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে কোরআন শিক্ষায় আগ্রহী মানুষ এই বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবেন। শুধু কোরআন শরিফ পড়তে পারাই নয়, কোরআনের মর্মবাণী আত্মস্থ করার শিক্ষাও এই বিদ্যালয়ে দেওয়া হবে। 

এই বিদ্যালয়ে পড়তে আসা ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থাও থাকবে। এতে থাকবে পঞ্চ-মাত্রিক একটি সিনেমা থিয়েটার, যেখানে কোরআনের বিভিন্ন কাহিনী নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। মোট কথা, এই বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করে ছাত্রছাত্রীরা অনুভব করতে পারবেন যে, কোরআন শুধু একটি পবিত্র ধর্মগ্রন্থই নয়, এটি পরিপূর্ণ একটি জীবন বিধান সূত্র: ইরান কোরআন নিউজ এজেন্সি

৩টি মন্তব্য:

  1. মহাগ্রন্থ আল কুরআনকে নিয়ে বিভিন্ন রেকর্ড চলছে। এটা অবশ্যই ভাল উদ্দ্যোগ। ধন্যবাদ সবাইকে।

    উত্তরমুছুন
  2. এতো সুন্দর পোষ্টের জন্য ধন্যবাদ।

    উত্তরমুছুন
  3. ধন্যবাদ জনাব তালেব আপনার মন্তব্যের জন্য।

    উত্তরমুছুন

Blogger দ্বারা পরিচালিত.