Header Ads

৬০ বছর বয়েসে মাধ্যমিক পরীক্ষা !

শিক্ষার কোনও বয়স নেই। শিক্ষার মূল উপাদান হচ্ছে ইচ্ছা শক্তি। ইচ্ছা থাকলেই মানুষ যেকোনো বয়েসে শিক্ষা অর্জন করতে পারে। অবশ্য এই কথাগুলো বলা যতটা সহজ করাটা এতো সহজ নয়। ধরুন আপনার বয়স যদি হয় ৩০ বছর আপনি কি পারবেন স্কুলে ভর্তি হয়ে ৭ম শ্রেণীর ছাত্রদের সাথে ক্লাস করতে? হয়তো পারবেন না। কারণ লজ্জায় আপনি এই কাজটি করতে পারবেন না।

কিশোর-কিশোরীদের মাঝে বসে লেখাপড়া করতে গেলে আপনি সমাজ সংসারে এবং নিজের কাছেও হেয় হয়ে যাবেন। তবে আমাদের সমাজের আশে-পাশেই এমন অনেক সাহসী ব্যক্তি আছেন যাদের কাছে লজ্জা কোনও ব্যাপার নয় শিক্ষাটাই তাদের কাছে প্রধান বিষয়। আর এমনই একজন ব্যক্তি হচ্ছেন জমির হোসেন। তার বয়স এখন ৬০, আর এই বয়সেই তিনি মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে আলোচনার বিষয়বস্তু হয়েছেন।

জমির হোসেনের বাড়ি বাংলাদেশের যশোর জেলার কেশবপুর থানার বরণডালি গ্রামে। তার পরিবারের সকল সদস্যদের উৎসাহ এবং তার নিজের ঐকান্তিক ইচ্ছায় তিনি ২০১২ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন কোমল মতি শিশুদের সঙ্গে। শৈশবে যথারীতি তিনি স্কুলে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া শুরু করলেও ১৯৭৫ সালে অভাব-অনটন আর পারিবারিক প্রয়োজনে লেখাপড়ায় ইতি টানতে হয়েছিল তাকে। তার প্রিয় বই খাতা ছেড়ে তাকে ধরতে হয়েছিল সংসারের হাল। তখন তিনি বেগমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছিলেন। 

বাল্যকালে বাধ্য হয়ে লেখা পড়া বাদ দিলেও তার মন সর্বদা পড়ে থাকতো তার প্রিয় পাঠ্যপুস্তকের দিকে। সেখান থেকে ৩৫ বছর পরে তার নাতি-পুতিদের লেখাপড়া করা দেখে তাঁর বাল্যকালের সেই কথা আবার মনে পড়ে যায় এবং তার মনের বাসনা আবার জেগে উঠে। তিনি আবার ইচ্ছা পোষণ করেন লেখাপড়া শুরু করার। তিনি তার মনের কথা তার পরিবারবর্গদের খুলে বলেন। তার পরিবারবর্গ তার কথা শুনে তাকে আরও উৎসাহ প্রদান করে। ২০১১ সালে তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পাঁজিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এসএসসি কোর্সে ভর্তি হন। 

প্রথম সেমিস্টারে শেষে তিনি ২০১২ সালে কেশবপুর পাইলট স্কুল ন্ড কলেজ কেন্দ্র থেকে পরীক্ষা দিয়েছেনপরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় চুল-দাড়ি পাকা এক ৬০ বছরের বৃদ্ধ ছেলে-মেয়েদের সাথে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে। সবকটি পরীক্ষা শেষে জমির হোসেন জানিয়েছেন তার সকল পরীক্ষা ভাল হয়েছেন।
জমির হোসেন জানান তিনি নিয়মিত সন্ধ্যা থেকে রাত ১১-১২টা পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। বৃদ্ধ বয়সের কারণে পড়া তার মনে রাখতে একটু কষ্ট হলেও তিনি তা আয়ত্ত করতে অনেক শ্রম দিয়েছেন। 

তিনি কেন আবার লেখাপড়া পুনরায় শুরু করছেনই বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানিয়েছেন ,আমার সব সময় মনে হতো, জীবনে যদি একটি সনদ না থাকে তা হলে জীবনই বৃথা। ৩৫ বছর আগে লেখাপড়া না করতে পারার মনঃকষ্ট থেকে ফের শুরু করেছি। কেউ কেউ আমার লেখা পড়া দেখে হাসি তামাশা করে তাতে আমার কিছু আসে যায় না।তিনি আরও জানিয়েছেন লেখাপড়া শুরুর আগে তিনি তার ছেলেমেয়েদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তাঁরা সবাই তাঁকে উৎসাহ দিয়েছেন। লেখাপড়ার পিছনে সবচেয়ে বেশি তাকে উৎসাহ দিয়েছেন তার স্ত্রী মমতাজ বেগম।

৬০ বছর বয়েসে স্বামীর লেখাপড়া সম্পর্কে মমতাজ বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী এ বয়সে লেখাপড়া করায় আমি গর্বিত। আমি তাঁর লেখাপড়ার জন্য সব সময় সহযোগিতা করি।


জমির হোসেনের ব্যক্তিগত জীবনে রয়েছে তিন ছেলে দুই মেয়ে। বড় ছেলে বর্তমানে কৃষিকাজ করেন, ছোট ছেলে একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন, বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন এবং ছোট মেয়ে লেখাপড়া করছে। জমির হোসেনের নাতি-নাতনিও রয়েছে। তিনি তাদের সাথে একসাথে লেখাপড়া করেন।


জমির হোসেনের এই ঘটনা তার নিজ এলাকা ও পার্শ্ববর্তী গ্রামে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সমাজের সচেতন জনগোষ্ঠী মনে করেন, তার এই ইচ্ছা শক্তিকে হাসি-তামাশা ভেবে উড়িয়ে না দিয়ে এটা থেকে সবার শিক্ষা নেয়া উচিত।

৫টি মন্তব্য:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.