Header Ads

শয়তানের ত্রিভুজ বারমুডা ট্রায়াঙ্গল রহস্য

আমাদের এই পৃথিবীতে এত সব রহস্যময় বিষয়বস্তু আছে যে, তাতে এই সমগ্র পৃথিবীটাকেই একটি রহস্য মনে হবে। পৃথিবীতে এমন সব রহস্য রয়েছে যেগুলোর রহস্য সমাধান করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা পাগল হওয়ার জোগাড়। যার মধ্যে একটি অন্যতম রহস্য হচ্ছে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল রহস্য। বহু বছর ধরে এই স্থানটি নাবিক, পর্যটক বা বিজ্ঞানীদের কাছে রহস্য ঘেরা স্থান হিসেবে পরিচিতি পেয়ে আসছে। বছর থেকে বছর বিজ্ঞানীরা এই রহস্যময় স্থানটিকে নিয়ে অনুসন্ধান ও গবেষণা করে এসেছেন।

সম্প্রতি অবশ্য বিজ্ঞানীরা বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্যকে মিথ্যা বলে মন্তব্য করেছেন।এমনকি তারা বারমুডা ট্রায়াঙ্গলকে ঘিরে পূর্বের রহস্যময় ঘটনাগুলোকে মিথ্যা ও সাজানো বলে মতামত দিয়েছেন

বারমুডা ট্রায়াঙ্গল যা শয়তানের ত্রিভুজ নামেও পরিচিত, আটলান্টিক মহাসাগরের একটি বিশেষ অঞ্চল এটি, যেখানে বেশ কিছু জাহাজ ও উড়োজাহাজ রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হওয়ায় কথা বলা হয়। বারমুডা ট্রায়াঙ্গল সম্পর্কে অনেক আগে থেকেই বলা হতো যে, সমুদ্রে জাহাজ ডুবে গেলে সেটি উদ্ধার করা যায় কিন্তু এটা এমন স্থান যেখানে জাহাজ ডুবি হলে আতিপাতি করে খুঁজেও তার অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। শুধু জাহাজ নয়, এই অঞ্চলের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া অনেক বিমানও পতিত হয়েছে দুর্ঘটনায় এবং সেই বিমানের টুকরো গুলোও পর্যন্ত উদ্ধার করা যায় নি। 

অনেকে বলেছেন এই স্থানে জাহাজ বা বিমান আসলে সেটি অজানা শক্তির প্রভাবে সেটি অদৃশ্য হয়ে যায়। অনেকে মনে করেন ঐ সকল অন্তর্ধানের কারণ নিছক দুর্ঘটনা, যার কারণ হতে পারে প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা চালকের অসাবধানতা। আবার চলতি উপকথা অনুসারে এসবের পেছনে দায়ী হল কোন অতিপ্রাকৃতিক কোন শক্তি বা ভিনগ্রহের কোন প্রাণীর উপস্থিতি। তবে এ বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য রয়েছে যে , যেসব দুর্ঘটনার উপর ভিত্তি করে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলকে চিহ্নিত করা হয়েছে তার বেশ কিছু ভুল, কিছু লেখক দ্বারা অতিরঞ্জিত হয়েছে এমনকি কিছু দুর্ঘটনার সাথে অন্যান্য অঞ্চলের দুর্ঘটনার কোনই পার্থক্য নেই।

বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের বিস্তৃতি:


এই ত্রিভুজের উপর দিয়ে মেক্সিকো উপসাগর থেকে উষ্ণ সমুদ্র স্রোত বয়ে গেছে। এই তীব্র গতির স্রোতই অধিকাংশ অন্তর্ধানের কারণ। এখানকার আবহাওয়া এমন যে হঠাৎ করে ঝড় ওঠে আবার থেমে যায়, গ্রীষ্মে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। বিংশ শতাব্দীতে টেলিযোগাযোগ, রাডার ও স্যাটেলাইট প্রযুক্তি পৌঁছানোর আগে এমন অঞ্চলে জাহাজ ডুবি খুব স্বাভাবিক একটি ঘটনা। এই অঞ্চল বিশ্বের ভারী বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলকারী পথ গুলোর অন্যতম। জাহাজগুলো আমেরিকা, ইউরোপ ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে যাতায়াত করে। 

এছাড়া এটি হল প্রচুর প্রমোদ তরীর বিচরণ ক্ষেত্র। এ অঞ্চলের আকাশপথে বিভিন্ন রুটে বাণিজ্যিক ও ব্যক্তিগত বিমান চলাচল করে। ত্রিভুজের বিস্তৃতির বর্ণনায় বিভিন্ন লেখক বিভিন্ন মত দিয়েছেন। কেউ মনে করেন এর আকার ট্রাপিজমের মত, যা ছড়িয়ে আছে স্ট্রেইটস অব ফ্লোরিডা, বাহামা এবং ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ এবং ইশোর পূর্বদিকের আটলান্টিক অঞ্চল জুড়ে, আবার কেউ কেউ এগুলোর সাথে মেক্সিকোর উপসাগরকেও যুক্ত করেন। তবে লিখিত বর্ণনায় যে সাধারণ অঞ্চলের ছবি ফুটে ওঠে তাতে রয়েছে ফ্লোরিডার আটলান্টিক উপকূল, সান হোয়ান, পর্তু রিকো, মধ্য আটলান্টিকে বারমুডার দ্বীপপুঞ্জ এবং বাহামা ও ফ্লোরিডা স্ট্রেইটস এর দক্ষিণ সীমানা যেখান ঘটেছে অধিকাংশ দুর্ঘটনা।

রহস্যের সূচনা:


বারমুডা ট্রায়াঙ্গল বিষয়ে যারা লিখেছেন তাঁদের মতে ক্রিস্টোফার কলম্বাস সর্বপ্রথম এই ত্রিভুজ বিষয়ে অদ্ভুত অভিজ্ঞতার কথা লিখেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন যে তাঁর জাহাজের নাবিকেরা এ অঞ্চলের দিগন্তে আলোর নাচানাচি, আকাশে ধোঁয়া দেখেছেন। এছাড়া তিনি এখানে কম্পাসের উল্টাপাল্টা দিক নির্দেশনার কথাও বর্ণনা করেছেন। তিনি ১১ই অক্টোবর, ১৪৯২ তে তাঁর লগ বুকে লিখেছিলেন –"The land was first seen by a sailor (Rodrigo de Triana), although the Admiral at ten o'clock that evening standing on the quarter-deck saw a light, but so small a body that he could not affirm it to be land; calling to Pero Gutiérrez, groom of the King's wardrobe, he told him he saw a light, and bid him look that way, which he did and saw it; he did the same to Rodrigo Sánchez of Segovia, whom the King and Queen had sent with the squadron as comptroller, but he was unable to see it from his situation. The Admiral again perceived it once or twice, appearing like the light of a wax candle moving up and down, which some thought an indication of land. But the Admiral held it for certain that land was near..."

বর্তমানে বিশেষজ্ঞরা প্রকৃত লগবুক পরীক্ষা করে যে মত দিয়েছেন তার সারমর্ম হল, নাবিকেরা যে আলো দেখেছেন তা হল স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ব্যবহৃত নৌকায় রান্নার কাজে ব্যবহৃত আগুন, আর কম্পাসে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল নক্ষত্রের অবস্থান পরিবর্তনের কারণে। ১৯৫০ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর ই. ভি. ডব্লিউ. জোন্স সর্বপ্রথম এ ত্রিভুজ নিয়ে খবরের কাগজে লিখেন।এর দু বছর পর ফেইট ম্যাগাজিনে জর্জ এক্স. স্যান্ডসী মিস্ট্রি এট আওয়ার ব্যাক ডোরশিরোনামে একটি ছোট প্রবন্ধ লিখেন। এ প্রবন্ধে তিনি ফ্লাইট নাইনটিন ( ইউ এস নেভী-র পাঁচটি টি বি এম এভেন্জারবিমানের একটি দল, যা প্রশিক্ষণ মিশনে গিয়ে নিখোঁজ হয়) এর নিরুদ্দেশের কাহিনী বর্ণনা করেন এবং তিনিই প্রথম এই অপরিচিত ত্রিভুজাকার অঞ্চলের কথা সবার সামনে তুলে ধরেন।

১৯৬২ সালের এপ্রিল মাসে ফ্লাইট নাইনটিন নিয়ে আমেরিকান লিজান ম্যাগাজিনে লেখা হয়। বলা হয়ে থাকে এই ফ্লাইটের দলপতি কে নাকি বলতে শোনা গিয়েছে- We don't know where we are, the water is green, no white। এর অর্থ হল "আমরা কোথায় আছি জানি না, সবুজ বর্ণের জল, কোথাও সাদা কিছু নেই"। এতেই প্রথম ফ্লাইট নাইন টিনকে কোন অতি প্রাকৃতিক ঘটনার সাথে যুক্ত করা হয়। এরপর ভিন সেন্ট গডিসপ্রাণঘাতী বারমুডা ট্রায়াঙ্গল”( The Deadly Bermuda Triangle) নামে আর এক কাহিনী ফাঁদেন ১৯৬৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এর উপর ভিত্তি করেই তিনি আরও বিস্তর বর্ণনা সহকারে লিখেন "ইনভিজিবল হরাইজন" (Invisible Horizons) মানে অদৃশ্য দিগন্তনামের বই। 

আরও অনেক লেখকই নিজ নিজ মনের মাধুরী মিশিয়ে এ বিষয়ে বই লিখেন, তাঁরা হলেন জন ওয়ালেস স্পেন্সার, তিনি লিখেন "লিম্বো অফ দ্যা লস্ট" (Limbo of the Lost, 1969, repr. 1973), মানে বিস্মৃত অন্তর্ধানচার্লস বার্লিটজ লিখেন দি বারমুডা ট্রায়াঙ্গল”(The Bermuda Triangle, 1974), রিচার্ড উইনার লিখেন "দ্যা ডেভিল'স ট্রায়াঙ্গল" শয়তানের ত্রিভুজ” (The Devil's Triangle, 1974) নামের বই, এছাড়া আরও অনেকেই লিখেছেন। এরা সবাই ঘুরেফিরে একার্ট বর্ণিত অতি প্রাকৃতিক ঘটনাই বিভিন্ন স্বাদে উপস্থাপন করেছেন।

কুসচ এর ব্যাখ্যা:

লরেন্স ডেভিড কুসচ হলেন অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটি”-র রিসার্চ লাইব্রেরিয়ান এবং দ্যা বারমুডা ট্রায়াঙ্গল মিস্ট্রি: সলভড (১৯৭৫)এর লেখক। তাঁর গবেষণায় তিনি চার্লস বার্লিটজ এর বর্ণনার সাথে প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনার অসংগতি তুলে ধরেন। যেমন- যথেষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ থাকার পরেও বার্লিটজ বিখ্যাত ইয়টসম্যান ডোনাল্ড ক্রোহার্সট এর অন্তর্ধানকে বর্ণনা করেছেন রহস্য হিসেবে। আরও একটি উদাহরণ হল- আটলান্টিকের এক বন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়ার তিন দিন পরে একটি আকরিক-বাহী জাহাজের নিখোঁজ হবার কথা বার্লিটজ বর্ণনা করেছেন, আবার অন্য এক স্থানে একই জাহাজের কথা বর্ণনা করে বলেছেন সেটি নাকি প্রশান্ত মহাসাগরের একটি বন্দর থেকে ছাড়ার পর নিখোঁজ হয়েছিল। 

এছাড়াও কুসচ দেখান যে বর্ণিত দুর্ঘটনার একটি বড় অংশই ঘটেছে কথিত ত্রিভুজের সীমানার বাইরে। কুসচ এর গবেষণা ছিল খু্বই সাধারণ। তিনি শুধু লেখকদের বর্ণনায় বিভিন্ন দুর্ঘটনার তারিখ, সময় ইত্যাদি অনুযায়ী সে সময়ের খবরের কাগজ থেকে আবহাওয়ার খবর আর গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো সংগ্রহ করেছেন যা গল্পে লেখকরা বলেননি। কুসচ এর গবেষণায় যা পাওয়া যায় তা হল-
বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে যে পরিমাণ জাহাজ ও উড়োজাহাজ নিখোঁজ হওয়ায় কথা বলা হয় তার পরিমাণ বিশ্বের অন্যান্য সমুদ্রের তুলনায় বেশি নয়।

এ অঞ্চলে গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড় নিয়মিত আঘাত হানে, যা জাহাজ ও উড়োজাহাজ নিখোঁজ হওয়ার অন্যতম কারণ। কিন্তু বার্লিটজ বা অন্য লেখকেরা এধরনের ঝড়ের কথা অনেকাংশেই এড়িয়ে গিয়েছেন।

অনেক ঘটনার বর্ণনাতেই লেখকেরা কল্পনার রং চড়িয়েছেন। আবার কোন নৌকা নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে দেরিতে বন্দরে ভিড়লে তাকে নিখোঁজ বলে‌ প্রচার করা হয়েছে।

আবার কখনোই ঘটেনি এমন অনেক ঘটনার কথা লেখকেরা বলেছেন। যেমন- ১৯৩৭ সালে ফ্লোরিডার ডেটোনা সমুদ্রতীরে একটি বিমান দুর্ঘটনার কথা বলা হয়, কিন্তু সেসময়ের খবরের কাগজ থেকে এ বিষয়ে কোন তথ্যই পাওয়া যায়নি।

সুতরাং কুসচ এর গবেষণার উপসংহারে বলা যায়- লেখকরা অজ্ঞতার কারণে অথবা ইচ্ছাকৃত ভাবে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে বানোয়াট রহস্য তৈরি করেছেন।

অন্যদের প্রতিক্রিয়া:

মেরিন বীমা কোম্পানি লয়েড'স অব লন্ডন দেখেছে যে , এই ত্রিভুজে অন্য সমুদ্রের চেয়ে উল্লেখ্য করবার মত ভয়ংকর কিছু নেই। তাই তারা এই অঞ্চল দিয়ে গমনকারী কোন জাহাজের উপর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাশুল আদায় করে না। যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ড লেখকদের বর্ণনার উপর ব্যাপক অনুসন্ধানের পর অনুমোদন করেছে এই অঞ্চলে অস্বাভাবিক কিছু নেই। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- ১৯৭২ সালে ভি.এ. ফগ নামের একটি ট্যাংকার মেক্সিকো উপসাগরে বিষ্ফোরনের পর ডুবে যায়। কোস্ট গার্ডরা সে বিধ্বস্ত ট্যাংকারের ছবি তোলেন এবং বেশ কিছু মৃত দেহও উদ্ধার করেন। কিন্তু কতিপয় লেখক বলেছেন ঐ ট্যাংকারের সব আরোহী অদৃশ্য হয়ে গেছে, শুধুমাত্র এর ক্যাপ্টেনকে তার কেবিনের টেবিলে হাতে কফির মগ ধরা অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। 

টিভি সিরিয়াল NOVA / Horizon এর দ্যা কেস অব দ্যা বারমুডা ট্রায়াঙ্গল (১৯৭৬-০৬-২৭)পর্বে বলা হয়েছিল , যে সব দুর্ঘটনার কথা বলা হয় সেগুলো ভিত্তিহীন। সংশয়বাদী গবেষকগণ, যেমন আর্নেস্ট ট্যাভস এবং ব্যারি সিংগার দেখিয়েছেন যে , মিথ্যে রহস্য তৈরি করা বেশ লাভজনক। কারণ তখন ঐ মিথ্যে রহস্যের উপর ভিত্তি করে বই লিখে বা টিভিতে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করে প্রচুর অর্থ কামানো যেত।

বারমুডা ট্রায়াঙ্গলটি কিছু স্থলভাগের উপর দিয়েও গিয়েছে যেমন পোর্তো রিকো বাহামা এমন কি বারমুডা নিজেই। কিন্তু এসব জায়গায় কোন স্থল যানের নিখোঁজ হবার খবর জানা যায়নি। এছাড়া এই ত্রিভুজের মধ্যে অবস্থিত ফ্রীপোর্ট শহরে বড়সড় জাহাজ কারখানা রয়েছে আর রয়েছে একটি বিমান বন্দর, যা কোন গোলযোগ ছাড়াই বছরে ৫০,০০০ টি বিমানের ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

প্রাকৃতিক ঘটনার মাধ্যমে ব্যাখ্যা:

মিথেন হাইড্রেটস: 

কন্টিনেন্টাল সেলভে জমে থাকা বিপুল পরিমাণ মিথেন হাইড্রেট অনেক জাহাজ ডোবার কারণ বলে দেখা গেছে। অস্ট্রেলিয়ায় পরীক্ষাগারের গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বাতাসের বুদবুদ পানির ঘনত্ব কমিয়ে দেয়। তাই সাগরে যখন পর্যায়ক্রমিক মিথেন উদগীরন হয়, তখন পানির প্লবতা কম। যদি এমন ঘটনা ঐ এলাকায় ঘটে থাকে তবে সতর্ক হবার আগেই কোন জাহাজ দ্রুত ডুবে যেতে পারে।

১৯৮১ সালে ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভেএকটি রিপোর্ট প্রকাশ করে, যাতে বর্ণিত আছে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ উপকূলের বিপরীতে ব্ল্যাক রিজ এলাকায় মিথেন হাইড্রেট রয়েছে। আবার ইউএসজিএস(ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভে) এর ওয়েব পেজ থেকে জানা যায়, গত ১৫০০ বছরের মধ্যে ঐ এলাকায় তেমন হাইড্রেট গ্যাসের উদগীরন ঘটেনি।

কম্পাসের ভুল দিক নির্দেশনা: 

কম্পাসের পাঠ নিয়ে বিভ্রান্তি অনেকাংশে এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের কাহিনীর সাথে জড়িত। এটা মনে রাখা প্রয়োজন যে কম্পাস থেকে চুম্বক মেরুর দূরত্বের উপর ভিত্তি করে এর দিক নির্দেশনায় বিচ্যুতি আসে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- যুক্তরাষ্ট্রে শুধুমাত্র উইসকনসিন থেকে মেক্সিকোর উপসাগর পর্যন্ত সরলরেখা বরাবর চৌম্বক উত্তর মেরু সঠিক ভাবে ভৌগোলিক উত্তর মেরু নির্দেশ করে। এই সাধারণ তথ্য যে কোন দক্ষ পথ-প্রদর্শকের জানা থাকার কথা। কিন্তু সমস্যা হল সাধারণ মানুষকে নিয়ে, যারা এ বিষয়ে কিছুই জানে না। ঐ ত্রিভুজ এলাকা জুড়ে কম্পাসের এমন বিচ্যুতি তাদের কাছে রহস্যময় মনে হয়। কিন্তু এটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা।

হারিকেন: 

হারিকেন হল শক্তিশালী ঝড়। ঐতিহাসিক ভাবেই জানা যায়, আটলান্টিক মহাসাগরে বিষুব রেখার কাছাকাছি অঞ্চলে শক্তিশালী হারিকেনের কারণে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে, আর ক্ষতি হয়েছে কোটি কোটি টাকার। রেকর্ড অনুসারে ১৫০২ সালে স্প্যানিশ নৌবহর ফ্রান্সিসকো দ্য বোবাডিলাএমনি একটি বিধ্বংসী হারিকেনের কবলে পড়ে ডুবে যায়। বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের কাহিনীর সাথে জড়িত অনেক ঘটনার জন্য এধরনের হারিকেনই দায়ী।

গলফ স্ট্রিম: 

গলফ স্ট্রিম হল মেক্সিকো উপসাগর থেকে স্ট্রেইটস অব ফ্লোরিডা হয়ে উত্তর আটলান্টিকের দিকে প্রবাহিত গরম সমুদ্র স্রোত। একে বলা যায় মহা সমুদ্রের মাঝে এক নদী। নদীর স্রোতের মত গলফ স্ট্রিম ভাসমান বস্তু কে স্রোতের দিকে ভাসিয়ে নিতে পারে। যেমনি ঘটেছিল ১৯৬৭ সালের ২২ ডিসেম্বর উইচক্রাফটনামের একটি প্রমোদ তরীতে। মিয়ামি তীর হতে এক মাইল দূরে এর ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দিলে তার নাবিকরা তাদের অবস্থান কোস্ট গার্ডকে জানায়। কিন্তু কোস্ট গার্ডরা তাদেরকে ঐ নির্দিষ্ট স্থানে পায়নি।

দৈত্যাকার ঢেউ: 

হঠাৎ করেই সমুদ্রে দৈত্যাকার ঢেউ সৃষ্টি হতে পারে, এমন কি শান্ত সমুদ্রেও এমন ঘটতে পারে। তবে একথা বিশ্বাস করার কোন কারণ নেই যে, বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে এমন ঢেউ নিয়মিত সৃষ্টি হয়।

মানব ঘটিত দুর্ঘটনা:

অনেক জাহাজ এবং বিমান নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার তদন্তে দেখা গিয়েছে এর অধিকাংশই চালকের ভুলের কারণে দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে। মানুষের ভুল খুবই স্বাভাবিক ঘটনা, আর এমনি ভুলের কারণে দুর্ঘটনা বারমুডা ট্রায়াঙ্গলেও ঘটেতে পারে। যেমন কোস্ট গার্ড ১৯৭২ সালে ভি.এ. ফগ এর নিখোঁজ হবার কারণ হিসেবে বেনজিন এর পরিত্যক্ত অংশ অপসারণের জন্য দক্ষ শ্রমিকের অভাবকে দায়ী করেছে। সম্ভবত ব্যবসায়ী হার্ভি কোনভার এর ইয়ট টি তাঁর অসাবধানতার কারণেই নিখোঁজ হয়। অনেক নিখোঁজের ঘটনারই উপসংহারে পৌঁছানো যায়নি, কারণ অনুসন্ধানের জন্য তাদের কোন ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

ইচ্ছাকৃত ধ্বংস সাধিত:

যুদ্ধের সময় অনেক জাহাজ শত্রু পক্ষের অতর্কিত আক্রমণে ডুবে গিয়ে থাকতে পারে বলে মনে করা হয়। এ কারণেও জাহাজ নিখোঁজ হতে পারে। তবে বিশ্বযুদ্ধের সময় বেশ কিছু জাহাজ, যাদের মনে করা হয় এমনি কারণে ডুবেছে, তাদের উপর অনুসন্ধান করা হয়। তবে শত্রু পক্ষের নথিপত্র, নির্দেশনার লগ বই ইত্যাদি পরীক্ষা করে তেমন কিছু প্রমাণ করা যায়নি। যেমন- মনে করা হয় ১৯১৮ সালে ইউ এস এস সাইক্লোপস এবং ২য় বিশ্বযুদ্ধে এর সিস্টার শিপ প্রোটিয়াস এবং নিরিয়াস কে জার্মান ডুবোজাহাজ ডুবিয়ে দেয়। কিন্তু পরবর্তীতে জার্মান রেকর্ড থেকে তার সত্যতা প্রমাণ করা যায়নি।

আবার ধারণা করা হয় জলদস্যুদের আক্রমণে অনেক জাহাজ নিখোঁজ হয়ে থাকতে পারে। সে সময়ে প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমাংশে এবং ভারত মহাসাগরে মালবাহী জাহাজ চুরি খুব সাধারণ ঘটনা ছিল। মাদক চোরাচালানকারীরা সুবিধা মত জাহাজ, নৌকা, ইয়ট ইত্যাদি চুরি করত মাদক চোরাচালানের জন্য। ১৫৬০ থেকে ১৭৬০ পর্যন্ত ক্যারিবিয়ান অঞ্চল ছিল জলদস্যুদের আখড়া। কুখ্যাত জলদস্যু এডওয়ার্ড টিচ এবং জেন ল্যাফিট্টি ছিল ঐ অঞ্চলের বিভীষিকা। তবে শোনা যায় জেন ল্যাফিট্টিই নাকি বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের শিকার হয়েছিল।

আর এক ধরনের দস্যুতার কথা শোনা যায়, যা পরিচালিত হত স্থল থেকে। এধরনের দস্যুরা সমুদ্র ধারে রাতে আলো জ্বালিয়ে জাহাজের নাবিকদের বিভ্রান্ত করত। নাবিকরা ঐ আলোকে বাতি ঘরের আলো মনে করে সেদিকে অগ্রসর হত। তখন জাহাজগুলি ডুবো পাহাড়ের সাথে সংঘর্ষে ডুবে যেত। আর তারপরে ডোবা জাহাজের মালপত্র তীরের দিকে ভেসে এলে দস্যুরা তা সংগ্রহ করত। হয়তো ডুবন্ত জাহাজে কোন নাবিক বেঁচে থাকলে দস্যুরা তাদেরকেও হত্যা করত।

বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে বহু বছর ধরে রহস্য থাকলেও বর্তমানের বিজ্ঞানীরা এটিকে নিছক সাজানো নাটক বা ব্যবসায়িক স্বার্থের কথা বলে মন্তব্য করেছেন। পূর্বে যখন এটি রহস্য ঘেরা স্থান ছিল এখন সেটিকে মিথ্যা বলা হচ্ছে তবে বর্তমানের বিজ্ঞানীদের মন্তব্য সঠিক কিনা সেটি প্রমাণ হবে ভবিষ্যতের বিজ্ঞানীদের গবেষণার দ্বারা। তখন হয়তো আবার জানা যাবে সত্যিই এটি রহস্য ঘেরা এলাকা নাকি সত্যিই সাজানো নাটক।

1 টি মন্তব্য:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.