Header Ads

নবাব সিরাজের ঐতিহাসিক তরবারি

নিজ দেশকে শত্রু মুক্ত রাখতে ও নতুন নতুন রাজ্য দখল করার কাজে তরবারি ব্যবহার হতো কয়েক দশক আগে পর্যন্ত। যুদ্ধ ক্ষেত্রের অস্ত্র হিসেবে তরবারি ব্যবহার হয়ে এসেছে হাজার হাজার বছর ধরে। বিশ্বের অনেক সেনা নায়ক বা সেনাপতি নিজ দেশকে শত্রু মুক্ত রাখতে নিজের শেষ রক্ত বিন্দু পর্যন্ত তরবারি চালিয়ে গেছেন।
বিশ্বের বিভিন্ন যাদুঘরে এমন অনেক তরবারি আছে যা বিখ্যাত রাষ্ট্র নায়ক বা সেনা নায়কেরা ব্যবহার করেছিল। যাদুঘরের এই সকল তরবারি প্রতিদিন শতশত লোক দর্শন করে এবং তাদের সাহস ও শৌর্য-বীর্য দেখে অনুপ্রাণিত হয়। বাংলাদেশের এক যাদুঘরেও সংরক্ষিত রয়েছে এমন একজন রাষ্ট্র নায়কের ঐতিহাসিক তরবারি। আর সেই তরবারিটি হচ্ছে নবাব সিরাজ উদ দৌলার।


বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব ছিলেন নবাব সিরাজ উদ দৌলা। ১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্র কাননে ইংরেজদের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে বাংলার স্বাধীনতা অস্তমিত হয় দুশত বছরের জন্য। সেজন্য উপমহাদেশের ইতিহাসে নবাব সিরাজ উদ দৌলা ও পলাশীর যুদ্ধ একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। ইংরেজদের কুট কৌশল থেকে নিজ সাম্রাজ্যকে রক্ষ করা ও ভারত বর্ষের সম্পদকে লুটেরাদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আজীবন লড়াই করে গেছেন নবাব সিরাজ। 

১৭৫৬-১৭৫৭ সাল পর্যন্ত বাংলার মসনদে সমাসীন ছিলেন সিরাজ উদ দৌলা। কিন্তু ইংরেজদের চক্রান্ত ও তার পরিবার পরিজনের বিশ্বাসঘাতকতার ফলে ইংরেজদের সাথে তিনি চূড়ান্তভাবে পরাজিত হন এবং ভারতের স্বাধীনতা ভুলন্ঠিত হয়। ইংরেজদের এই জয়ের ফলে তারা ভারতীয় উপমহাদেশে প্রায় ২০০ বছর রাজত্ব করার সুযোগ পায়।

নবাব সিরাজ উদ দৌলার মৃত্যুর পর তার মূল্যবান ব্যবহার্য সামগ্রী লুট ও পাচার হয়ে যায়। এসব সামগ্রী বিশ্বের বিভিন্ন যাদুঘর ও ব্যক্তিগত সংগ্রহ শালায় চলে যায়। সেসময় ঢাকার বলধার জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী নবাব সিরাজের ব্যবহৃত একটি তরবারি সংগ্রহ করতে সক্ষম হন। তিনি তরবারিটি মুর্শিদাবাদ থেকে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে ক্রয় করেন। বলধার জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী ছিলেন একাধারে একজন জমিদার, কবি, সংগীতজ্ঞ, ভ্রমণ পিয়াসীপ্রকৃতি প্রেমী। 

এর বাইরেও তার একটি ভাল পরিচয় ছিল। জমিদার নারায়ণ রায় ছিলেন একজন বিখ্যাত সংগ্রাহক। সমসাময়িককালে তার মতো এত বড় মাপের সংগ্রাহক আর দ্বিতীয় কেউ ছিল না। বর্তমানে বাংলাদেশের রাজধানীতে অবস্থিত বলধা গার্ডেন তারই প্রতিষ্ঠিত। সমসাময়িক তিনি সেখানে একটি বলধা যাদুঘরও স্থাপন করেন। বর্তমানে অবশ্য সেটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তৎকালীন সময়ে সেই যাদুঘরে তিনি দেশ-বিদেশ থেকে হাজার হাজার বিরল ও দুষ্প্রাপ্য সামগ্রী সংগ্রহ করে তার যাদুঘরটি সমৃদ্ধ করেছিলেন। তার সংগ্রহশালার সংগৃহীত উপাদানের মধ্যে নবাব সিরাজের তরবারিটি ছিল অন্যতম। জমিদার নারায়ণ রায়ের মৃত্যুর পর তার পরিবার নবাব সিরাজের তরবারিটি ঢাকা যাদুঘরে দান করে। অদ্যাবধি নবাব সিরাজের তরবারিটি ঢাকা যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।

নবাব সিরাজ উদ দৌলার ব্যবহৃত এই তরবারিটির নাম ছিল ফিরাঙ্গী। এটির দৈর্ঘ্য ৪২ ইঞ্চি বা ৩.৬ ফুটতরবারিটির রং উজ্জ্বল সাদা, এটির মাথা সূচালো এবং উভয় দিক ধারালো। তরবারিটির হাতল হাতির দাঁত দিয়ে বাধানো। এর গায়ে আরবি হরফে আল্লাহর প্রশংসামূলক বাক্য লেখা আছে।

নবাবের এই তরবারিটি কোনও যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছিল কিনা জানা যায়নি। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের তৃতীয় তলার অস্ত্রশস্ত্র গ্যালারির দক্ষিণ পাশের দেয়ালে সাঁটানো একটি কাচের শোকেসে এই মহামূল্যবান নিদর্শনটি সংগৃহীত আছে। যাদুঘরে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীরা নবাবের শৌর্য-বীর্যের প্রতীক এই তরবারিটি দেখে আজও তার বীরত্বের কথা স্মরণ করেন এবং তার মতো সাহসী বীর হওয়ার দীপ্ত শপথ গ্রহণ করে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.