Header Ads

উত্তর কোরিয়ার রহস্যময় পুরুষ কিম জং ইল !

বিশ্বজুড়ে মহান ব্যক্তির সংখ্যা খুব বেশী না হলেও কমও নয়। বিশ্বের সূচনালগ্ন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত অসংখ্য বিখ্যাত বা সম্মানীয় ব্যক্তি বিশ্বকে অলংকৃত করে গেছেন। যাদের মধ্যে সর্বশেষ যিনি পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন তিনি হলেন উত্তর কোরিয়ার প্রাণ প্রিয় নেতা কিম জং ইল। কিম জং ছিলেন উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ ব্যক্তি। তিনি তার দেশের মানুষের কাছে অত্যন্ত প্রিয় ভাজন ছিলেন। তিনি যে কতটা কোরীয়দের মনে জায়গা করে বসে ছিলেন তা তার জীবিত থাকাকালে পরিপূর্ণভাবে বোঝা যায়নি।

তার প্রতি কোরীয়দের ভালবাসার সত্যিকারের প্রমাণ পাওয়া গেছে তার মৃত্যুর পর। তার মৃত্যুর সংবাদ যখন রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা করা হয়েছিল তখন উত্তর কোরিয়ার অধিবাসীগন যে যেই স্থানে ছিল সে সেই স্থানে তার মৃত্যুর খবর শুনে অঝরে কেঁদেছে। এমন কি তাদের সেই কান্না যেন আর শেষ হতেই চাচ্ছিল না। উত্তর কোরীয়বাসী তাদের প্রিয় নেতার শোকে কেঁদেছে অন্তত এক সপ্তাহ ধরে। তাহলে বুঝুন তারা কতই না ভালবাসত তাদের প্রিয় নেতা কিম জংকে।

উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং-ইলের আকস্মিক মৃত্যুর খবরে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল দেশবাসী। ১৭ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখ রেল ভ্রমণের সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। বিশ্ববাসী তাঁকে একরোখা একনায়ক বলে জানত। বিশ্ববাসী ধারনা করতো হয়তো কিম জংকে তাদের অধিবাসীরা সবাই পছন্দ করে না তার একনায়কতন্ত্রের কারণে। তবে তাঁর মৃত্যুর পর প্রমাণ হলো আসলেই দেশবাসী তাঁকে কতটা ভালবাসত। তিনি ছিলেন উত্তর কোরিয়ার সর্বময় কর্তা। 

ার হুকুমে কোরীয়রা পরিচালিত হতো। উত্তর কোরিয়ার ভাগ্য দেবতা, হুকুম দাতা বা নেতা যাই বলা হোক না কেন সব কিছুই ছিলেন তিনি। এত কিছুর পরও তিনি ছিলেন রহস্যময় পুরুষ। কারণ তিনি রহস্যময় জীবনযাপন করতেন। তাঁর অনেক তথ্যই এখনও সবার কাছে অজানা। কিমের জীবনের রহস্যময় এবং উত্তর কোরিয়ার অজানা এমন কিছু তথ্য সম্প্রতি অনুসন্ধান করে বের করেছে দ্য টেলিগ্রাফ।

উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় নথি অনুযায়ী কিম জং ১৯৪২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি উত্তর কোরিয়ার সীমান্তবর্তী বায়েকদু মাউন্টেনের একটি গোপন সামরিক ঘাঁটিতে জন্ম গ্রহণ করেন অন্যদিকে সোভিয়েত সরকারের নথি অনুযায়ী, কিম ১৯৪১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার ভায়াত্সকোয়ে গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মের তারিখ দুটি হওয়া থেকেই তার রহস্যময়তা শুরু। উত্তর কোরিয়ায় জাপানের দখলদারিত্বের সময় কিমের বাবা রাশিয়ায় আত্মগোপনে ছিলেন। ধারণা করা হয়, কিম জং ইলের উচ্চতা মাত্র ৫ ফুট ২ ইঞ্চি (১৫৭ সেন্টিমিটার)। তবে তিনি নিজের উচ্চতা বেশি দেখাতে জুতার তলায় আলাদা হিল ব্যবহার করতেন, এমনকি তিনি উচ্চতা দেখাতে চুলের স্টাইলেও পরিবর্তন এনেছিলেন।


সন্দেহ করা হয় কিম তাঁর ছোট ভাই কিম সু-রাকে খুন করেছিলেনখুন করার সময় কিমের বয়স ছিল মাত্র পাঁচ বছর। তবে ওই সন্দেহ সন্দেহই থেকে গেছে। কারণ কখনো এটি প্রমাণ করা যায় নি। কিম ১৯৬০ সালে কিম ইল-সাং বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি ও অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। চার বছর পর তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। 


কিম জংয়ের কত জন সন্তান আছে সেটিরও সঠিক তথ্য জানা যায়নি। ধারণা করা হয় কিম পাঁচ সন্তান রেখে মারা গেছেন। তার সবচেয়ে ছোট ছেলে কিম জং-উন তাঁর উত্তরাধিকারী নির্বাচিত হয়ে বাবার পদে বসেছেন বড় ছেলে কিম জং-নামকে একসময় নিজের উত্তরাধিকারী ভাবতেন কিম। তবে জাল পাসপোর্টে টোকিও সফরকালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর রাগে অভিমানে প্রিয়ভাজনের তালিকা থেকে বাদ দেন নামের নাম
 
কিমের মৃতদেহ
সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় কিমের মা কিম জং সুক মারা যান বলে তাঁর আত্মজীবনীতে উল্লেখ আছে। তবে ধারণা করা হয়, তার মা গুলিতে আহত হয়ে মারা যান। কিম জং-ইলের অন্তত ৫০টি নাম আছে। দেশবাসী তাঁকে এসব নামে ডাকত। এর মধ্যে আছে ডিয়ার লিডার (প্রিয় নেতা), সুপ্রিম লিডার (সর্বোচ্চ নেতা), আওয়ার ফাদার (আমাদের বাবা), দ্য জেনারেল, জেনারেলিসিমো অন্যতম। কিম সব সময়ই ট্রেনে রাষ্ট্রের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ভ্রমণ করতেন। ধারণা করা হয়, তিনি আকাশপথে ভ্রমণে ভয় পেতেন এবং তিনি তাঁর বাবাকে তার ভয় পাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছিলেন। 

সিনেমা দেখার পোকা ছিলেন কিম জং-ইল। তাঁর সংগ্রহে ২০ হাজারের বেশি সিনেমার ভিডিও ছিল বলে জানা গেছে তার প্রিয় চলচ্চিত্র ছিল রম্বো’, ‘ফ্রাইডে দ্য থার্টিনথ’, ‘গর্জিলা তিনি বিভিন্ন দেশের সিনেমা দেখতেন। তবে বিশেষ করে হলিউড, হংকং ও চীনের সিনেমা ছিল তার বেশী প্রিয়। কিম প্রয়াত হলিউড অভিনেত্রী এলিজাবেথ টেইলরের বিশেষ ভক্ত ছিলেন। বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র দেখে তিনি নিজ দেশে চলচ্চিত্র শিল্প তৈরির জন্য ১৯৭৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার চলচ্চিত্র পরিচালক শিন সাং-ওক ও তার অভিনেত্রী স্ত্রী চিও ইউন-হিকে অপহরণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। 

তাঁরা উত্তর কোরিয়ায় অবস্থানকালে সাতটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। ১৯৮৬ সালে তাঁরা উত্তর কোরিয়া ছেড়ে পালিয়ে যান। ১০০ পর্বের দেশাত্মবোধ তথ্যচিত্র নির্মাণের প্রযোজনা করেছিলেন কিম নিজেই। এ ছাড়া তিনি অন দ্য আর্ট অব সিনেমানামে একটি বইও লিখেছেন। তিনি ছয়টি অপেরা কম্পোজ করেছিলেন। সংগীতের প্রতি তিনি ছিলেন সদা অনুরাগী। হলিউডের ছবি টিম আমেরিকারপ্রধান খলনায়কের নামকরণ করা হয় কিমের নামে।

তার জীবন যাপন ছিল অত্যন্ত ব্যয় বহুল। উত্তর কোরিয়ায় তাঁর প্রাসাদ তুল্য ১৭টি বাসভবন রয়েছে। উত্তর কোরিয়ায় একটি কথা প্রচলিত আছে, কিমের যেদিন যে মুড থাকে, সেদিনের আবহাওয়াও সে রকম আচরণ করে।

কিম যেমন রহস্যময় পুরুষ ঠিক তেমনি উত্তর কোরিয়াও রহস্যময় দেশ। কারণ, উত্তর কোরিয়াকে বিশ্বের অন্যতম গোপন রাষ্ট্র হিসেবে মনে করা হয়। গোপন রাষ্ট্র বলা হয় এই কারণে যে, তাদের তথ্য সহজে উদ্ধার করা যায় না।
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সেনাবাহিনী এখন উত্তর কোরিয়ার। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের হিসাবে দেশটিতে প্রায় ১২ লাখ সেনাসদস্য কর্মরত আছেন। অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় সেনাসদস্যের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৮০ হাজার। উত্তর কোরিয়া ১৯৮০-র দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের কাজ থেকে পরমাণু কর্মসূচি গ্রহণ করে বলে মনে করা হয়। 

কিম নিজেকে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ মনে করলেও উত্তর কোরিয়ার দুই কোটি ৩৯ লাখ মানুষ স্বাধীনভাবে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে না। উত্তর কোরিয়ায় রাষ্ট্রীয় কোনও ধর্মের স্বীকৃতি নেই। উত্তর কোরিয়ায় বর্তমানে পুরুষের গড় আয়ু ৭৬ বছর এবং নারীদের গড় আয়ু ৮৩ বছর। কিম জং এর যতই দোষ থাকুক আর নাই থাকুক। তিনি উত্তর কোরীয়দের কাছে পিতার সমান। তবে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে তিনি রহস্যময় পুরুষ হিসেবেই পরিচিত।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.