Header Ads

কাবার গিলাফ যেভাবে তৈরি করা হয় এবং যেভাবে পরানো হয়

পবিত্র কাবা শরিফকে আবৃত করে রাখা হয় এক ধরনের কাপড় দ্বারাযাকে আমরা বলি গিলাফ এবং আরবরা বলে কিসওয়াহজ্জ্বের কয়েকদিন আগে কাবার নিচের অংশ থেকে গিলাফ কিছুটা উপরে তুলে দেয়া হয় যাতে কাবা শরিফের বাইরের অংশ দেখা বা ধরা যায়গিলাফের ইতিহাস কাবা শরিফের ইতিহাস থেকে শুরু হয়েছেজানা যায়, তুব্বা আল হোমায়রি প্রথমে মোটা কাপড় দিয়ে গিলাফ তৈরির প্রচলন শুরু করেনইসলাম পূর্ব সময়ে অনেকে কাবা শরিফের গায়ে গিলাফ পরিয়েছেন, কারন তারা এটিকে ওয়াজিব মনে করতেন

তখন একটার উপর আরেকটা গিলাফ পরানো হতোগিলাফগুলো ভারী বা পুরাতন হয়ে গেলে সরিয়ে ফেলা হতোগিলাফের উপর গিলাফ পরানোর ফলে ওজন বেড়ে কাবা শরিফের দেয়াল ভেঙ্গে যাওয়ার আশংকা সৃষ্টি হলে ১৬০ হিজরিতে খলিফা আল মাহদী কাবা শরিফের গায়ে একই সময়ে একটার বেশী গিলাফ পরানো নিষিদ্ধ ঘোষনা করেন
আব্বাসী খলিফা আল মামুনের সময়ে কাবা শরিফের গায়ে তিনবার গিলাফ পরানো হতোপ্রথমবার ৮ জিলহজ্জ্ব লাল সিল্কের গিলাফ, দ্বিতীয়বার ১ রজব মিসরীয় সাদা কাবাতি কাপড়ের গিলাফ এবং তৃতীয়বার ২৯ রমজান সিল্কের তৈরি গিলাফ লাগানো হতোআব্বাসীয় খলিফ আল নাসির প্রথমে কাবা শরিফে সবুজ ও পরে কালো রঙের গিলাফ পরানসেখান থেকে আজ অবধী কাবা শরিফে কালো রঙের গিলাফ লাগানো হচ্ছে৭৫১ হিজরিতে মিসরের বাদশাহ ইসমাইল বিন নাসের বিন কলাউন কাবা শরিফের গিলাফ তৈরির জন্য একটি বিশেষ ওয়াকফ ঘোষনা করেনএই ওয়াকফ থেকে প্রতি বছর খানায়ে কাবার জন্য বাইরের একটি কালো গিলাফ এবং একটি অভ্যন্তরীন লাল গিলাফ তৈরি করা হতো। 

এখন কাবা শরিফের দরজা ও বাইরের গিলাফ দুটোই মজবুত রেশমি কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়গিলাফের মোট ৫টি টুকরো তৈরি করা হয়চারটি টুকরো চারদিকে এবং বাকি টুকরোটি দরজায় লাগানো হয়টুকরোগুলো পরস্পর সেলাই করা থাকেবর্তমানে প্রতি বছর ৯ জিলহজ্জ্ব কাবা শরিফের গায়ে পরানো হয় নতুন গিলাফনতুন গিলাফ পরানোর সময়ে পুরাতন গিলাফটি সরিয়ে ফেলা হয়পরে পুরাতন গিলাফটি কেটে মুসলিম দেশের রাষ্ট্র প্রধানদের উপহার দেয়া হয়

প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন রেশম দিয়ে তৈরি করা হয় কাবার গিলাফরেশমকে রং দিয়ে কালো করা হয়পরে গিলাফে বিভিন্ন দোয়ার নকশা আকাঁ হয়গিলাফের উচ্চতা ১৪ মিটারউপরের তৃতীয়াংশে ৯৫ সেন্টিমিটার চওড়া বন্ধনীতে কোরআনের আয়াত লেখাবন্ধনীতে ইসলামী করুকার্য খচিত একটি ফ্রেম থাকেবন্ধনীটি সোনার প্রলেপ দেওয়া রুপালি তারের মাধ্যমে এমব্রয়ডারি করা হয়এই বন্ধনীটি কাবা শরিফের চার ধারে পরিবেষ্টিত থাকে৪৭ মিটার j¤^v বন্ধনীটি ১৬ টুকরায় বিভক্ত থাকেবন্ধনীটির নিচে প্রতি কোনায় সূরা ইখলাস, নিচে পৃথক পৃথক ফ্রেমে লেখা হয় কোরআনের ছয়টি আয়াতএতে এমব্রয়ডারি করে উপরে সোনা ও রুপার চিকন তার লাগানো হয়

এছাড়া গিলাফে ১১ টি নকশা করা মোমবাতির প্রতিকৃতি বসানো হয়এগুলো কাবা শরিফের চার কোনে লাগানো হয়খানায়ে কাবার দরজার পর্দাটিকে বলা হয় বোরকাএটাও কালো রেশম কাপড় দিয়ে তৈরিএর উচ্চতা সাড়ে সাত মিটার ও প্রস্থ চার মিটারএতে ইসলামি নকশা ও কোরআনের আয়াত লেখা থাকেএই লেখাগুলোও সোনা ও রুপার চিকন তার দিয়ে এমব্রইডারি করা হয়

কাবার গিলাফের প্রতিটি কাপড়ের জন্য প্রয়োজন হয় ৬৭০ কেজি রেশম, ১৫০ কেজি সোনা ও রুপার চিকন তার৪৭ থান সিল্কের কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয় এই গিলাফযার মোট আয়তন ৬৫৮ বর্গ মিটারপ্রতিটি থান এক মিটার j¤^v ও ৯৫ সেন্টিমিটার চওড়াএকটা আরেকটার সাথে সেলাই করা থাকেপ্রতিবছর দুটি করে গিলাফ তৈরি করা হয়একটি মূল এবং অপরটি সতর্কতার জন্য তৈরি করে রাখা হয়একটি গিলাফ হাতে তৈরি করা হয়, যেটা তৈরিতে সময় লাগে আট-নয় মাসঅন্যটি মেশিনে মাত্র এক মাসে তৈরি করা হয়গিলাফ তৈরি করার পর তা কাবা শরিফের চাবির রক্ষক বনি শাইবা গোত্রের মনোনীত সেবকের কাছে হস্তান্তর করা হয়পরে সবার সহযোগীতায় গিলাফ কাবা শরিফের গায়ে চড়ানো হয়
কাবা শরিফের গিলাফ তৈরির কারখানাটি মক্কার উম্মুল জুদে অবস্থিতএই কারখানাটি ৬টি অংশে বিভক্ত, যথা: বেল্ট, হস্তশিল্প, যান্ত্রিক, ছাপা, রং এবং অভ্যন্তরিন পর্দা বিভাগএই কারখানায় বর্তমানে ২৫০ জনের বেশী কর্মচারী নিয়েজিত আছে

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.