Header Ads

আমেরিকার আনন্দ-ভয়ের ভূত উৎসব !

হঠাৎ শুনতে পেলেন চারদিকে লোকজন ভূত ভূত বলে চিৎকার করছে কিংবা ভূত আপনার বাড়ির দরজায় এসে কড়া নাড়ছে। আপনি কি চমকিয়ে যাবেন নাকি ভয় পাবেন। নিশ্চয়ই চমকিয়ে উঠবেন এবং সেই সাথে ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠবেন। কিন্তু আপনি কি জানেন আমেরিকানদের কাছে ভূত কোনও বিষয় নয়। ভূত প্রতিবছর তাদের বাড়িতে আসে এবং তারা ভূতদের দেখে ভয় পাওয়ার বদলে তাদেরকে উপহার দিয়ে থাকে।

এবার হয়তো আপনার বিষয়টা রহস্যময় মনে হচ্ছে বা আপনি ভাবছেন আসলেই আমেরিকানরা খুবই সাহসী। কিন্তু তা নয়। তাহলে এবার আসুন সত্যিটা কি সেটা জানার চেষ্টা করি।

আমরা যেমন বছরের বিভিন্ন দিন ঈদ, পূজা, ক্রিসমাস ইত্যাদি উৎসব পালন করে থাকি। আমেরিকানরা তেমনি বছরের বিশেষ একটি দিন ভূত উৎসব পালন করে থাকে। ভূতের জন্য নির্দিষ্ট এই দিনটি হচ্ছে প্রতি বছরের ৩১ অক্টোবর তারিখ। এই দিনের এই ভূত উৎসবকে হ্যালুইন বলা হয়ে থাকে। ৩১ অক্টোবর সন্ধ্যায় আমেরিকাসহ ইউরোপের অনেক দেশে হ্যালুইন উৎসব পালন করা হয়। এদিনে বাড়ির বাসিন্দারা দরজা খুলেই দেখতে পান দলে দলে ভূতেরা দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে। তখন তারা ভূতদের বিভিন্ন রকম উপহার সামগ্রী প্রদান করে তাদের খুশি করে, যাকে বলে ট্রিক অর ট্রিট অর্থাৎ আমাদের খুশি করো নয়তো ভয় দেখাবো

হ্যালুইন উৎসব প্রথম শুরু হয়েছিল আয়ারল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডে। আইরিশ ও স্কটিশ লোকসাহিত্যে হ্যালুইনকে বলা হয়েছে সুপারন্যাচারাল এনকাউন্টারস হিসেবে। তখনকার মানুষের বিশ্বাস ছিল, গ্রীষ্মকাল শেষে শীতের শুরুতে হ্যালুইন সন্ধ্যায় সব মৃত স্বজনদের আত্মারা নেমে আসে পৃথিবীর বুকে। অষ্টম শতাব্দীতে পোপ গ্রেগরি ১ নভেম্বরকে 'অল সেইন্টস ডে' ঘোষণা করেন এবং তার আগের সন্ধ্যা অর্থাৎ ৩১ অক্টোবরকে 'অল-হ্যালোস-ইভ' বা হ্যালুইন নামে অভিহিত করেন। 


মানুষের অন্ধ বিশ্বাস ছিল অল-হ্যালোস-ইভ-এ প্রেতাত্মারা নেমে আসে। তারা মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে আসে। আর তাই এই প্রেতাত্মাদের প্রতিহত করতে সবাই একসঙ্গে জড়ো হয়ে আগুন জ্বালিয়ে আগুনের চারপাশ ঘিরে নানা ভঙ্গিতে ভূতদের পাল্টা ভয় দেখাত। সেই বনফায়ার থেকেই 'জ্যাক-ও-লণ্ঠন'-এর উৎপত্তি। আইরিশ ও স্কটিশরা শালগম সুন্দর করে কেটে ভূতের হাসি মাখা মুখের অবয়ব দিয়ে লণ্ঠন বানিয়ে সবার বাড়ির সীমানায় জ্বালিয়ে রাখত, যেন প্রেতাত্মারা আলো দেখেই ভয়ে পালিয়ে যায়। 

অনেকে খড়-বিচালি দিয়ে কাতাড়ুয়া বানিয়ে সাজিয়ে রাখত একই উদ্দেশ্যে।
হ্যালুইন উৎসবকে ঘিরে একটা গল্পও প্রচলিত আছে। গল্পটা হলো, যুদ্ধের মাঠেকবার এক সৈনিকের মাথা তার শত্রু তরবারির আঘাতে দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। এরপর থেকে ওই মুণ্ডহীন সৈনিক ভূত হয়ে রাতের বেলা ওই পথে বসে থাকতো। কেউ ওই পথ দিয়ে গেলেই তাকে মেরে ফেলত। তাই লোকজন মুণ্ডহীন সৈনিকের ভয়ে সেই পথে না গিয়ে অন্য পথ দিয়ে বাড়িতে ফিরত। যখন ওই মুণ্ডহীন সৈনিক দেখলো এই পথ দিয়ে কেউ আসছে না তখন সে বুদ্ধি করে মিষ্টিকুমড়া দিয়ে তার মাথা বানিয়ে ঘাড়ে বসিয়ে বিভিন্ন মানুষের বাড়ি গিয়ে তাদের হত্যা করতো। তবে বর্তমান সময়ের অধিকাংশ ব্যক্তিই বলেন এই গল্পটি ছিল একটি কুসংস্কার।

আইরিশ নাগরিকরাই প্রথম হ্যালুইনের প্রচলন করে উত্তর আমেরিকায়। বর্তমানে হ্যালুইন শুধু বাচ্চাদের আনন্দ উৎসব। পূর্বে আইরিশরা 'জ্যাক-ও-লণ্ঠন' বানানোর জন্য টারনিপ ব্যবহার করলেও বর্তমানে আমেরিকানরা পামকিন ব্যবহার করে। কারণ লণ্ঠন তৈরিতে পামকিন অনেক বেশি সহজ। হ্যালুইনের সঙ্গে আইরিশ ও স্কটিশদের ধর্মীয় অনুভূতি জড়িত রয়েছে তাই এই উৎসবের সাথে ভূত-প্রেতের থিমটাও ধরে রাখা হয়েছে। শিশুরা ওইদিন ভূত সেজে সবাইকে ভয় দেখিয়ে আনন্দ পায়। আবার এই ভূতদের তুষ্ট করতে বা বশ মানাতে চকোলেট, ক্যান্ডি দেওয়া হয়। বাণিজ্যিক কোম্পানিগুলো এই রাতের বিশেষ একটি খেলার নাম ট্রিক অর ট্রিটবাচ্চারা এই দিনে ভূত সেজে মা-বাবার কাছে গিয়ে ভয় দেখায় আর মা-বাবারা তাদের সন্তানদের খুশি করতে তাদের হাতে চকলেট সহ বিভিন্ন উপহার ধরিয়ে দেয়।


আমেরিকার ওয়াল মার্টের অর্ধেক এলাকাজুড়ে চাষ করা হয় মিষ্টিকুমড়া। ফলে সেখানে মিষ্টি কুমড়া খুবই সহজ লভ্য। হ্যালুইনের রাতে সেখানের জনসাধারণ  কুমড়া ও চাল রাখার মাটির মটকা দিয়ে হাস্যমুখী ভূতের অবয়ব তৈরি করে। তারপর সেই কুমড়া ভূতগুলোকে দরজার সামনে সাজিয়ে রাখে। এছাড়াও তারা বিভিন্ন ভৌতিক কস্টিউম যেমন ভূতের মুখোশ, কঙ্কালের মুখোশ, কালো বিড়াল, কালো বাঘ, স্পাইডারম্যান বা সুপারম্যানের কস্টিউমসহ নানারকম ভয়ঙ্কর ডিজাইনের পোশাক এবং মুখোশ পরে থাকে। মেয়েরা পরে থাকে পরী, সিনড্রেলা বা তুষার কন্যার কস্টিউম। হ্যালুইনের দিনে আমেরিকায় প্রচুর পরিমাণে চকলেট ও ক্যান্ডি বিক্রি হয়ে থাকে।


হ্যালুইন উৎসবটি মূলত একটি ব্যবসায়ীক উৎসব। এই দিনে প্রচুর পরিমাণে উপহার সামগ্রী বিক্রয় হয় সেজন্য ব্যবসায়ীরা তাদের নিজস্ব উদ্যোগে এই দিবসটিকে মানুষের মাঝে জনপ্রিয় করে তুলেছে। প্রথম দিকেও এই উৎসবটি ফসল ঘরে তোলার মৌসুমে পালিত হতো যাতে জনসাধারণের সবার কাছে অর্থ-সম্পদ থাকে। ব্যবসায়ীক স্বার্থে ব্যবসায়ীরা দিবসটি দিন দিন আরও বেশী জনপ্রিয় করে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.