Header Ads

জার্মানির ব্যতিক্রমী চিকিৎসা জাদুঘর !

জাদুঘর বিশ্বের প্রায় সকল দেশে রয়েছে। পুরাতনকে নবীনদের মাঝে পরিচিত করা বা পুরাতনকে স্মরণ করার জন্য জাদুঘর নির্মাণ করা হয়। পুরাতন ইতিহাস, ঐতিহাসিক বিষয়, প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রহ ইত্যাদি নিয়ে মূলত জাদুঘর নির্মাণ করা হয়। তবে এসবের বাইরেও বিভিন্ন বিষয়ের জাদুঘর দেখতে পাওয়া যায়। এই সকল জাদুঘরগুলো একটু ব্যতিক্রমী হয়ে থাকে অন্যান্য জাদুঘর গুলো থেকে।

যেমন উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, তুসোর মোমের জাদুঘরের কথা। ব্যতিক্রমী যেসকল যাদুঘর আছে তার মধ্যে অন্যতম একটি জাদুঘরের কথা আজ আমরা জানবো। ব্যতিক্রমী এমনই একটি জাদুঘর হচ্ছে জার্মানির বার্লিন মেডিকেল মিউজিয়াম। ইউরোপ মহাদেশের অন্যতম বৃহবিশ্ববিদ্যালয় ও ক্লিনিক হলো জার্মানির শারিটেআন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসক ও গবেষকরা কর্মরত আছেন এই ক্লিনিকে।
১৮৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত শারিটে ক্লিনিকের রয়েছে নিজস্ব একটি জাদুঘর। তবে এই জাদুঘরটি অন্যান্য জাদুঘর থেকে একটু আলাদা। কারণ এই জাদুঘরে কোনও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন নেই, নেই কোনও ঐতিহাসিক বিষয়ও বরং রয়েছে মানবদেহের নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। ডা. রুডলফ ভিরকোভ অক্লান্ত পরিশ্রমে করে গড়ে তুলেছেন এই মিউজিয়াম। বিখ্যাত এই মিউজিয়ামে বর্তমানে পরিচালক হিসেবে রয়েছেন টমাস শার্লক। এই জাদুঘরটি তৈরি করার জন্য ডা. ভিরকোভ মানুষের প্রায় ২৩ হাজার আর্দ্র ও শুষ্ক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংগ্রহ করেছিলেন। 

এটি চামড়ার নিচে মানুষের শরীরের এক নিপুণ প্রদর্শনী । মানুষের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন হৃৎপিণ্ড, যকৃৎ, ফুসফুস, কিডনি ইত্যাদি রোগাক্রান্ত হয়ে পড়লে কেমন দেখায় তা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ মানুষদের দেখানোর জন্য এই জাদুঘরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিন শতকের চিকিৎসাক্ষেত্রে উন্নয়নের একটি ধারণাও পাওয়া যায় এই জাদুঘরে। এই জাদুঘর তৈরির পর এর উপর দিয়ে দুটি বিশ্বযুদ্ধ অতিবাহিত হলেও শোকেস ও গ্লাসের পাত্রে রাখা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো বিশ্বযুদ্ধের ধাক্কা সামলে এখনো অক্ষত রয়েছে। 

মানুষের কিডনি, যকৃত, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস ইত্যাদি দেখতে কেমন হয়, এগুলো কিভাবে কাজ করে, এগুলোর দ্বারা আমরা কিভাবে সুস্থভাবে বেচে থাকি এই সব বিষয়ে জানতে দর্শকরা এই জাদুঘরে আগমন করে থাকে। কাচের শোকেসে রাখা পেস মেকার লাগানো হার্ট, ফুলে যাওয়া কিডনি, টিউমার, এমনকি মানবদেহের বিকৃত বা অস্বাভাবিক ভ্রূণগুলোকে কৌতূহল ও কিছুটা উদ্বেগ নিয়ে নিরীক্ষণ করে থাকেন দর্শকরা। টমাস শার্লক মনে করেন উনিশ শতকের প্রথমার্ধে এসব অস্বাভাবিক ভ্রূণকে বিজ্ঞানের এক রহস্য বলে মনে করা হতো। তাই তৎকালীন সময় থেকে বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা শুরু হয়। বিখ্যাত এই জাদুঘরটি উদ্বোধন করা হয় ১৮৯৯ সালে। 

জাদুঘরটির উদ্বোধনের সময়ই এই ধরনের অস্বাভাবিক ভ্রূণ প্রদর্শন করেছিলেন ডা. রুডলফ ভিরকোভ। ডা. রুডলফ মূলত একজন মৃতদেহ পরীক্ষক হলেও মূলত তার লক্ষ্য ছিল জীবিত মানুষের স্বাস্থ্যরক্ষা করা। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মানব কোষের রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসার উপায় খুঁজে বের করার জন্য তিনি মৃতদেহ নিয়ে গবেষণা করতেন। এই জাদুঘরে চিকিৎসাবিদ ভিরকোভের সংগ্রহগুলো তুলে ধরার পাশাপাশি গত ৩০০ বছরে চিকিৎসাক্ষেত্রের উন্নয়ন ও ভুলত্রুটিগুলোও তুলে ধরা হয়েছে। কলেরা, সিফিলিস ও যক্ষ্মার সংক্রমণ, এছাড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ক্রমোন্নতি, অপারেশনের যন্ত্রপাতি, অচেতন করার পদ্ধতি ইত্যাদি সম্পর্কেও জানতে পারেন দর্শকরা এখানে এসে। অনেকে এই জাদুঘরে এসে ভাবেন মানুষ জাতি যে বেচে আছে এটিই একটা বড় বিস্ময়।

গত ৩০০ বছরের চিকিৎসার ইতিহাস থেকে ১০ জন রোগীর কথা তুলে ধরা হয়েছে এই প্রদর্শনীতে, যারা নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এছাড়াও তুলে ধরা হয়েছে ১৭ বছরের এক তরুণীর কথা, যে ১৭২৭ সালে প্রচণ্ড যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে তার গর্ভে আড়াআড়িভাবে থাকা এক বাচ্চার জন্ম দিয়েছিল। ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ফ্রিডরিশ আউগুস্ট নামে এক তরুণের কথা, যে জ্বরে ভুগে মারা গিয়েছিল। 


দর্শকরা এখানে আসলে জানতে পারবেন হান্স নামে এক ব্যক্তির কথা, যিনি ১৯৫৮ সালে পোলিও রোগে আক্রান্ত হয়ে কৃত্রিম ফুসফুসের সাহায্যে দীর্ঘ দিন বেচে ছিলেন। ২০০৬ সালে ৫৫ বছর বয়স্ক কার্ল নামে এক ব্যক্তি আঙ্গুলের ক্ষত থেকে রক্তদুষ্টিতে আক্রান্ত হন। চারবার অপারেশন করা হয়েছিল তাকে, এছাড়া দুই সপ্তাহ কৃত্রিম কোমায় ছিলেন তিনি। এই সকল কাহিনীও বর্ণিত আছে এই জাদুঘরে।

মানুষের শরীর যন্ত্র মহান স্রষ্টা যে কিভাবে তৈরি করেছেন সেটি জানার জন্য এই জাদুঘরটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। বিভিন্ন লোক নানান ধরনের ব্যতিক্রমী কাজ করে থাকেন, তবে ডা. রুডলফ ব্যতিক্রমী যে কাজটি করেছেন সেটি সবাইকে বিস্মিত করেছে। তার এই সৃষ্টি কর্মের ফলে আজ অনেকে মানব শরীর সম্পর্কে নানা বিষয় জানতে পারছে। প্রতিবছর হাজার হাজার লোক এই জাদুঘর দর্শনে আসে এবং মানব দেহের রহস্যে বুদ হয়ে যায়।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.