অপরাধীদের ভয়ংকর শাস্তি করিডা ডি টোরস
বিশ্বব্যাপী সাজা প্রদানের রয়েছে বিভিন্ন পদ্ধতি। সাজা দেওয়ার
প্রতিটি পদ্ধতিই কঠিন ও নির্মম। তবে তার মধ্যে কিছু কিছু পদ্ধতি আছে এমন নির্মম
যাকে ভয়ংকর বললেও ভুল হবে না। অপরাধীর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ
হওয়ার পর প্রায় অধিকাংশ দেশে রশিতে ঝুলিয়ে ফাঁসি কার্যকর করার বিধান চালু
আছে।
এছাড়াও গুলি করে হত্যা, তরবারি দ্বারা শিরোচ্ছেদ বা রাসায়নিক ইনজেকশন পুশ করার মাধ্যমেও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এই সকল বিধান গুলো নতুন তবে এর আগেও বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের মৃত্যুদণ্ডের বিধান প্রচলিত ছিল। যেগুলো ছিল খুবই অমানবিক। এই সকল অমানবিক পদ্ধতির মধ্যে অন্যতম একটি পদ্ধতি ছিল করিডা ডি টোরস।
এছাড়াও গুলি করে হত্যা, তরবারি দ্বারা শিরোচ্ছেদ বা রাসায়নিক ইনজেকশন পুশ করার মাধ্যমেও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এই সকল বিধান গুলো নতুন তবে এর আগেও বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের মৃত্যুদণ্ডের বিধান প্রচলিত ছিল। যেগুলো ছিল খুবই অমানবিক। এই সকল অমানবিক পদ্ধতির মধ্যে অন্যতম একটি পদ্ধতি ছিল করিডা ডি টোরস।
’করিডা
ডি টোরস’ কথাটির
বাংলা
অর্থ ষাঁড়ের লড়াই। প্রাচীন ফ্রান্সে
এই বিধান প্রচলিত ছিল। ফ্রান্সে মৃত্যু দণ্ডাদেশ প্রাপ্ত
অপরাধীকে তার শাস্তি স্বরূপ নির্মমভাবে হত্যা করার
জন্য অতিকায় একটি ষাঁড়ের সামনে ছেড়ে দেয়া হতো। চার
দিকে প্রাচীর ঘেরা একটি স্বল্প পরিসর জায়গায়
সেই মানুষটিকে ছেড়ে দেওয়া হতো বিরাট একটি ষাঁড়ের সামনে। যেখানে
চলত ষাঁড়ের হামলা ও মানুষটির
জীবন বাঁচানোর আপ্রাণ লড়াই।
ষাঁড়টি লম্বা ও খাড়া দুটো শিং বাগিয়ে তেড়ে যেত হতভাগ্য
মানুষটির দিকে।
মানুষটিকে এই ষাঁড়ের
আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য মরিয়া হয়ে লড়াই করতে হত। ষাঁড়টাও এমন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত
থাকতো
যে,
যতক্ষণ পর্যন্ত তার প্রতিদ্বন্দ্বীর দেহটি নিঃসাড় হয়ে না পড়ত
ততক্ষণ নিবৃত্ত হতো না। শুধু কি তাই? শত শত দর্শক জড়ো হতো এ মরণ যুদ্ধ
স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করার জন্য। তারা আনন্দের
সাথে উপভোগ করতো এই নির্মম হত্যাযজ্ঞ।
মৃত্যুদন্ড প্রদানের এই পদ্ধতিটি এক সময় খেলায়ও রুপ নেয়। ফ্রান্স ছাড়া পর্তুগাল এবং স্পেনে এক সময় এ খেলা খুব জনপ্রিয় ছিল। এই
খেলার মধ্য
দিয়ে বীরত্বের পরিচয় দেওয়ার নৃশংস পন্থা আজও প্রচলিত রয়েছে এই
সকল দেশে। এই খেলায় মৃত্যু
অবশ্যম্ভাবী জেনেও মানুষ মরণ দূত
ষাঁড়ের সঙ্গে লড়াইয়ে লিপ্ত হতো। হাজার হাজার দর্শকের সামনে চলত
মানুষের বীরত্ব প্রদর্শনের প্রয়াস। ষাঁড়ের আক্রমণে
ক্ষত-বিক্ষত ও রক্তাত্ব হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়তো মানুষটি। তবে প্রতি
ক্ষেত্রে যে মানুষই মৃত্যুর শিকার হতো এমনও ছিল না।
গায়ের জোর ও বুদ্ধির কৌশল প্রয়োগ করে কোনও কোনও ক্ষেত্রে দুর্ধর্ষ ষাঁড়টিকেও প্রতিদ্বন্দ্বী মানুষটি কব্জা
করে ফেলত। ষাঁড়ের শিং ভেঙে রক্তারক্তি কাণ্ড
ঘটাত। প্রাণনাশ করে লাভ করত শ্রেষ্ঠ বীরের সম্মান।
কোনও কোনও ক্ষেত্রে দেখা যেত যোদ্ধা ষাঁড়টির
মেজাজ মর্জি ভালো না থাকলে ষাঁড়টি যুদ্ধে প্রবৃত্ত হতে
উৎসাহ প্রকাশ করতো না। তখন তাকে উত্তেজিত করার জন্য তার
সামনে এক টুকরো লাল কাপড় নাড়াতে হতো। ব্যাস, ক্রোধে ফোঁস ফোঁস করতে করতে
ঝাঁপিয়ে পড়ত প্রতিদ্বন্দ্বীর ওপর। মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, ষাঁড়টির
মধ্যে উত্তেজনার সঞ্চার করতে কেবলমাত্র লাল কাপড়
ব্যবহার করা হতো কেন? লাল রং
ছাড়া অন্য কোনও রং কি
ষাঁড়কে ক্ষুব্ধ করে
তুলতে সক্ষম নয়?
অবশ্যই সক্ষম। বর্তমান জীববিজ্ঞানীদের
মতে ষাঁড় বর্ণান্ধ। অতএব তার কাছে লাল, নীল, কালো বা সাদা সব রংই সমান। তারা রংয়ের পার্থক্য বোঝে না বলে তাদের
সামনে যে কোনও কাপড়
নাড়লেই তারা রেগে একেবারে অগ্নিশর্মা হয়ে যায়।
ষাঁড়ের সাথে যে প্রতিদ্বন্দ্বী যোদ্ধা লড়াই করে তাকে ’মাটাডোর’ বলা হয়। বর্তমানে এই
ভয়াবহ খেলাটি বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত হয়। রুদ্ধশ্বাস এই খেলা দর্শকরা
হতবাক হয়ে দেখে থাকে। প্রতিবছর অনেক খেলোয়াড় এই খেলা খেলতে গিয়ে মারাত্মক ভাবে আহত
হয়ে থাকেন। তারপরও বর্তমানে এটি একটি জনপ্রিয় ও আকর্ষণীয় খেলা।
কোন মন্তব্য নেই