Header Ads

এবোটাবাদে ওসামা বিন লাদেনের রহস্যময় বাড়ি !

ওসামা বিন লাদেন, যিনি বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য নিন্দিত বা নন্দিত। সৌদি বংশোদ্ভূত ওসামা বিন লাদেন প্রথম জীবনে যুক্তরাষ্ট্রের সহচর থাকলেও ১১ সেপ্টেম্বর ২০০১ আমেরিকার টুইন টাওয়ারে হামলার পর তাদের মধ্যে সম্পর্কের ফাটল ধরে। টুইন টাওয়ারে হামলার দায়-দায়িত্ব লাদেন স্বীকার না করলেও এই হামলার পিছনে লাদেনের হাত রয়েছে অজুহাতে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বুশ প্রশাসন ২০০১ এর ০৭ অক্টোবর আফগানিস্তানে হামলা করে।

লাদেন অজুহাতে আফগানিস্তান ধ্বংস-বিধ্বস্ত করে ফেললেও তারা লাদেনকে জীবিত বা মৃত ধরতে ব্যর্থ হয়। এরপর লাদেন বিভিন্ন সময় টিভিতে ভিডিওয়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি দিয়ে আসতে থাকে এবং মার্কিন প্রশাসন লাদেনকে খুঁজতে থাকে বিশ্বব্যাপী। লাদেন কোথায় লুকিয়ে আছে এই প্রশ্নে যখন বিশ্ববাসী সন্দিহান তখন লাদেন বহাল তবিয়তে লুকিয়ে ছিলেন পাকিস্তানের এবোটাবাদের একটি বাড়িতে। জনৈক আল কায়দা জঙ্গির খোঁজে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই ২০০৩ সালে এবোটাবাদে একবার হানা দিয়েছিল। 

আইএসআই এর এক কর্মকর্তাই এ কথা জানিয়েছেন তারপরও ২০০৫ সাল থেকে ওসামা সেখানে লুকিয়ে ছিলেন কিভাবে সেটা একটা রহস্যের বিষয়! পরে অবশ্য এই এবোটাবাদে পাহাড় ঘেঁষা সাদা রংয়ের দ্বিতল একটি বাড়ি থেকেই গ্রেফতার হন লাদেন। লাদেন যতদিন এই বাড়িতে বাস করতেন তত দিন বাড়িটি সবার কাছে সাধারণ থাকলেও এটি এখন সবার কাছে একটি রহস্যময় বাড়ি।

ধারনা করা হয় এই বাড়িকে কেন্দ্র করে হিজবুল্লাদের আনাগোনা ছিল। কানাডীয় একটি সংবাদপত্র এক পাক পুলিশ কর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, এই বাড়ির জমিটা ছিল হিজবুল মুজাহিদিনেরকিন্তু বাইরে জমির মালিকানা নিয়ে মুখ খুলতে বারণ ছিল বাড়িতে কারা থাকতো বা কাদের দেখা যেত এব্যাপারে রয়েছে মতভেদ। কেউ বলেছেন, বাড়িতে একজন বুড়ো লোককে দেখতাম আবার কেউ বলেছেন, আমরা তো ভাবতাম দুই পাকিস্তানি ভাই বাড়িটিতে ভাড়া থাকেন। 

তবে যিনিই থাকুন, এতদিন এবোটাবাদের সেই বাড়ির বাসিন্দাদের সম্পর্কে প্রতিবেশীরা একটি কথা সবাই একই বলেছেন। বাড়ির প্রতিবেশীরা বলেছেন, এখানে যারা বসবাস করতো সেই লোকগুলো কেমন যেন একটু ব্যতিক্রম ছিল। তারা পাড়ার কারও সঙ্গে মিশতো না, কোনও অনুষ্ঠানেও যেত নামাঝেমধ্যে শুধু একটি বুলেট প্রুফ গাড়ি ভিতরে ঢুকতগাড়ি ঢোকার জন্য যতটুকু জায়গা দরকার মূল গেটটি ঠিক ততটুকুই খুলত এই বাড়ির পাশে খোলা মাঠে বাচ্চারা যখন ক্রিকেট খেলতে গেয়ে বল ওই বাড়ির ভিতরে চলে যেত তখন তারা ভয়ে সেই বলটি ভিতরে আনতে যেত না, ভিতর থেকেও কেউ বলগুলো ফেরত দিত না। 

ওসামা বিন লাদেনের মৃতদেহ ওই বাড়ি থেকে বের করার পর 'রহস্যময়' সেই বাড়ি সম্পর্কে নানা খবর জানিয়েছে প্রতিবেশীরাতারা বলেছেন, বাড়িটি ছিল একটি রহস্যময় ও বিচ্ছিন্ন দ্বীপ এখানেই থাকতেন বিশ্বের 'মোস্ট ওয়ান্টেড' সন্ত্রাসী কিন্তু আমরা কেউ জানতেও পারিনি। ওসামা বিন লাদেন নিহত হওয়ার পর থেকে বাড়িটি সবার কাছে আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে।


বাড়িতে কোনও বাচ্চা থাকত কিনা সেই প্রশ্নেও প্রতিবেশীরা দ্বিধাবিভক্ত। কেউ কেউ উত্তরে ‍না বললেও অন্য প্রতিবেশীরা বলেছে, বাড়িটির মধ্যে বেশ কিছু অল্পবয়সী ছেলে থাকততারা মাঝে মাঝে বাইরে বের হতো দোকান থেকে জিনিসপত্র কেনার জন্যতবে কখনোই তাদের সাথে প্রতিবেশী কোনও ছেলের কথা হয়নি।


এবোটাবাদের এই বাড়ীর অদূরে অবস্থিত ছিল পাকিস্থানের সেনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। তারপরও পাকিস্থানী সেনাদের ফাঁকি দিয়ে লাদেন এখানে কিভাবে লুকিয়ে ছিলেন সেটা একটি জটিল প্রশ্ন। এই বাড়ি সম্পর্কে পাকিস্থানের সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনারেল পারভেজ মোশাররফ বলেছেন, তিনি যখন সেনা একাডেমীতে শিক্ষানবিশে ছিলেন তখন এই বাড়ির এলাকা দিয়ে তিনি প্রতিদিন প্রায় ৯ মাইল দৌড়াতেন। হয়তো কোনও সময় তিনি এই বাড়ীর গেটের সামনেও দাঁড়িয়েছেন।

স্থানীয় এক সংবাদপত্র বণ্টনকারী জানিয়েছেন, উঁচু পাঁচিল টপকে ওই বাড়ির চত্বরে প্রতিদিন খবরের কাগজ ছুঁড়ে দিতেন তিনিতবে তাকে কোনোদিনই বাড়ির ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। প্রতি মাসের শেষে একজন বাইরে এসে তাকে টাকা মিটিয়ে দিতআরেক প্রতিবেশী জানিয়েছেন, এক মহিলা পরিচারিকা এই বাড়িতে কাজ করতে যেতেনতিনি রান্নাবান্না ও ধোয়ামোছা করতেনতবে তিনি ওই বাড়িতে ওসামার মতো কাউকেই কখনও দেখেননি বলে জানিয়েছেন দ্বিতল এই বাড়ীর ছাদে উঠতেও কোনও ব্যক্তিকে দেখেননি কোনও প্রতিবেশী। 

মার্কিন অফিসাররা বলেছেন, বাড়ির বাসিন্দারা বাইরে জঞ্জাল ফেলতেন নাবরং তারা তা বাড়ির চত্বরেই জ্বালিয়ে দিতেন! বাড়িটির ভিতরে ছিল পাঁচিল ঘেরা একটি বড় চত্বর। স্থানীয় পুলিশ বলেছে, বাড়িটির এই বিশাল চত্বরেই বিভিন্ন সবজি চাষ করা হতো এবং একধারে মুরগি পালন করা হতোএই বাড়ির বাসিন্দাদের এমন অদ্ভুত আচরণ দেখেও কৌতূহল জাগেনি 'ওয়াজিরিস্তান হাভেলি'র বাসিন্দাদের মনে। ওসামার প্রতিবেশীরা ভেবেছিলেন, বাড়ির বাসিন্দারা বোধ হয় কঠোরভাবে পর্দাপ্রথা মেনে চলেনকিন্তু সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ১ মে ২০১১ তারিখ প্রতিবেশীরা জানতে পারেন, রহস্যময় সেই বাড়ির রহস্যময় বাসিন্দার নাম- ওসামা বিন মহম্মদ বিন আওয়াদ বিন লাদেন! 

ওসামাকে গ্রেফতারের পর থেকে শুধু পাকিস্তান নয় বিশ্বব্যাপী মানুষের কাছে এবোটাবাদের এই বাড়িটি একটি রহস্যময় বাড়ী। কোনও সন্ত্রাসীর চিহ্ন ধরে না রাখার জন্য ২০১২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারী তারিখে পাকিস্তান সরকার এই বাড়িটি গুড়িয়ে দেয়।

1 টি মন্তব্য:

  1. লাদেন যেভাবে পাকিস্থানে লুকিয়ে ছিল, তাতে আমার মনে হয় তার পাকিস্তানে থাকার খবরটি পাকিস্তন আগে থেকেই জনাতো। তবে স্বাধীন পাকিস্থানে যুক্তরাষ্ট্রের অভাবে অভিযানকে আমি সমর্থন করি না।

    উত্তরমুছুন

Blogger দ্বারা পরিচালিত.