Header Ads

শুল্টের ব্যতিক্রমী বর্জ্য হোটেল !

পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের মানুষ বসবাস করে। কেউ পছন্দ করে নেতিবাচক কাজ করতে আবার কেউ নেতিবাচক কাজগুলোকে ইতিবাচক কাজে পরিণত করে। ধরুন, আপনি রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছেন, এমন সময় দেখলেন এক পথচারী কলা খেয়ে তার খোসাটা রাস্তায় ফেলে দিয়ে চলে গেল, আবার দেখলেন পরে অপর একজন এসে সেটিকে তুলে ডাস্টবিনে ফেলে দিল। দেখুন কতইনা পার্থক্য দুজনের মধ্যে। এটাই পৃথিবীর নিয়ম। কেউ হয় সচেতন আবার কেউ হয় অসচেতন।

আজ আপনাদের এমনই একজন ইতিবাচক ব্যক্তি ও তার কাজের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো।  তিনি হচ্ছেন জার্মানির এইচ এ শুল্ট। আর তার ইতিবাচক কাজটি হচ্ছে তিনি তার নিজের কাঁধেই নিয়েছেন পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব । শুল্ট পেশায় একজন শিল্পী। শিল্পীরা স্বভাবতই প্রকৃতি প্রেমিক হয়কিন্তু তার মতো ব্যতিক্রমী প্রকৃতি প্রেমিক হয়তো পৃথিবীতে আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে নাচল্লিশ বছর ধরে তিনি দেখছেন, কিভাবে মানবসভ্যতা পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। 

নানা কারণে পৃথিবীর পরিবেশ দূষিত হচ্ছেমানুষ ময়লা-আবর্জনা ফেলে পৃথিবীটাকে ডাস্টবিন বানিয়ে ফেলছে। নদী-সাগর উপচে পড়ছে বর্জ্যেএভাবে বর্জ্য ফেললে পৃথিবী আর টিকবে নাতাই পরিবেশ বাঁচাতে মানুষকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে তিনি গ্রহণ করেছেন এক পদক্ষেপ তবে মজার ব্যাপার এই যে, তার পদক্ষেপটা খুবই ব্যতিক্রমী।
সমুদ্র সৈকত থেকে তিনি কুড়িয়ে এনেছেন টনকে টন বর্জ্যআর সেই বর্জ্য দিয়ে তৈরি করেছেন একটি হোটেল তার তৈরি করা এই ধরনের হোটেল হয়তো বিশ্বে এটাই প্রথমহোটেলটি নির্মাণ করা হয়েছে রোমে। সঠিক পরিকল্পনা আর উদ্ভাবনী মনন থাকলে তুচ্ছ জিনিস থেকেও তৈরি করা যায় মহৎ কিছু তার প্রমাণ দিয়েছেন শুল্ট। শুল্ট নিজেই একজন শিল্পী সুতরাং তিনি তার শৈল্পিক মন দিয়ে গড়ে তুলেছেন তার হোটেলকে। 

এই ব্যক্তি বুকে ধারণ করে আছেন পৃথিবীর প্রতি অগাধ ভালবাসা। আর তাই তিনি পৃথিবীর কিছু এলাকা হলেও বর্জ্যের হাত থেকে মুক্তি দিতে চেয়েছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে উপায় খুঁজছিলেন কিভাবে পৃথিবীর বর্জ্য সরানো যায়। এই ভাবাতেই তার মাথায় বুদ্ধি আসে যদি বর্জকে সরানোর বদলে সৌন্দর্য হিসেবে ব্যবহার করা যায় তবে পৃথিবীর বর্জ্যও পরিষ্কার হবে আবার সৌন্দর্যও বৃদ্ধি ঘটবে। এরপর তিনি ভাবতে থাকেন কিভাবে বর্জকে সৌন্দর্যে রূপান্তরিত করা যায়। দীর্ঘ চিন্তার পর তিনি বর্জকে সৌন্দর্যে রূপ দিতে তৈরি করেন একটি আবর্জনার হোটেল। 

ইতালির রোমে তিনি আবর্জনার যে হোটেলটি বানিয়েছেন, তার তিনটি কক্ষ সাজাতে তিনি ব্যবহার করেছেন ১২ টন বর্জ্য। বিয়ারের ক্যান, গাড়ির টায়ার, সংবাদপত্র, কাগজ, জুতা-মোজা, ক্যামেরা, ফুটবল- কী নেই এর মধ্যে! এই সমস্ত টন টন বর্জ্য তিনি জোগাড় করেছেন ইউরোপের বিভিন্ন সমুদ্র সৈকত এবং বিশ্বের নানা স্থান থেকে এরপর পরিশোধনের জন্য তা পাঠান জার্মানিতেপরে তা ফিরিয়ে নেওয়া হয় রোমে। এবং এই আবর্জনা দ্বারাই তিনি তৈরি করেন সৌন্দর্য মণ্ডিত একটি হোটেল।

পরিবেশ বাঁচানোর জন্য মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যেই শুল্টের এই প্রয়াসতিনি চান, মানুষ দেখুক, কী পরিমাণ বর্জ্য তারা প্রতিদিন উৎপাদন করেতার ভাষায়, একটা বাজে সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা প্রতিদিন আমরা শত শত টন বর্জ্য তৈরি করছি। আমাদের পতনে বেশী দেরি নেই ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসে শুল্টের হোটেলটি উদ্বোধন করা হয়এই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন ডেনমার্কের ফ্যাশন তারকা হেলেনা ক্রিস্টেনসেন


আবর্জনা নিয়ে শুল্টের কাজ এই প্রথম নয়। সেই ৬০-এর দশক থেকে শুরু করে পরিবেশের জন্য বিভিন্ন কাজ করে চলেছেন শুল্টতার উল্লেখযোগ্যে আরেকটি সৃষ্টিকর্ম হচ্ছে 'বর্জ্য মানব'বর্জ্য দিয়ে তৈরি মানবাকৃতির এই ভাস্কর্যগুলো স্থাপন করা হয়েছে রোম, নিউইয়র্ক, মস্কোসহ বিভিন্ন শহরে বিশ্বজুড়ে বর্জ্য উৎপাদনের প্রতিবাদ হিসেবে তিনি তৈরি করেছেন এই শিল্পকর্ম গুলো।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.