Header Ads

শিয়াংচির ভালবাসার অপূর্ব এক নিদর্শন !

ভালবাসার জন্য পৃথিবীতে কত লোকই না কত কিছু করেছে। লাইলি-মজনু, শিরি-ফরহাদ, রোমিও-জুলিয়েট বা শাহজাহান-মমতাজের কথা কারও অজানা নেই। বিখ্যাত হওয়ার কারণে আমরা এই ব্যক্তিগুলোর ভালবাসার নিদর্শন সম্পর্কে জানি। তবে আমাদের জানার অগোচরে এরকম আরও অনেক ভালবাসার অপূর্ব নিদর্শন রয়েছে। যেগুলো আমরা খবর রাখি না। যেমন, শিয়াংচির তার স্ত্রীর প্রতি অপূর্ব ভালবাসার কথা। যিনি ভালবাসার নিদর্শন স্বরূপ নিজ স্ত্রীর মাথার খুলি নিজের সাথে বয়ে বেড়িয়েছেন দীর্ঘ ৩১ বছর।

চীনের সর্বশ্রেষ্ঠ বীরযোদ্ধা ছিলেন শিয়াংচি। তার বীরত্বের সুখ্যাতি ছড়িয়ে আছে বিশ্বব্যাপী। তার শৌর্য-বীর্যের সঙ্গে তৎকালীন সময় কারো তুলনা চলত নাশিয়াংচি যখন চীনের সেনাপতি ছিলেন সে সময় চীনের কেউ তার সমকক্ষ ছিল নাতার বীরত্ব ও শৌর্য-বীর্যের কারণে চীনের সবাই তাকে প্রচণ্ড সম্মান প্রদর্শন করত এবং তাকে ভালবাসতোএত বীরত্ব ও সম্মানের পরও শিয়াংচির একমাত্র সমস্যা ছিল তার স্ত্রী। সাধারণত একজন যোদ্ধার স্ত্রী প্রচণ্ড নির্ভীক ও সাহসী হওয়ার কথাকিন্তু শিয়াংচির মতো একজন বীরযোদ্ধার স্ত্রী হয়েও তার স্ত্রী ছিলেন ঠিক তার উল্টো 

যুদ্ধের নাম শুনলেই তিনি প্রচণ্ড ভয় পেতেনশিয়াংচি যখন যুদ্ধের পোশাক পরা অবস্থায় থাকতেন তখন তিনি স্বামীর মুখ দর্শন পর্যন্ত করতেন নাতিনি শিয়াংচিকে সবসময়ই বলতেন এবং বুঝাতেন যুদ্ধের চাকরি ছেড়ে অন্য কোনও সাধারণ চাকরি করতেশিয়াংচি তার স্ত্রীকে বুঝাতেন, একজন সৈনিকের চাকরি অনেক সম্মানের দেশের মানুষের আমার প্রতি যে আস্থা, যে সম্মান এবং যে বিশ্বাস এর মূল্য অনেকঅন্য চাকরি করলে এরকম সম্মান আমাকে কেউ করত নাতাছাড়া নিজের দেশের জন্য তো একটু ঝুঁকি নিতেই হবেকিন্তু তারপরও শিয়াংচির স্ত্রী ছিলেন নাছোড় বান্দা 

তিনি শিয়াংচিকে বারবার বলতেন, তোমাকে যুদ্ধের সাজে দেখলেই আমার ভয় হয়আমার মনে হয় আমি দম বন্ধ হয়ে মারা যাবশিয়াংচি এগুলোকে তার স্ত্রীর নিছক মনের ভয় ভেবে এড়িয়ে যেতেন এদিকে তার স্ত্রীর মনের ভয় ক্রমশ বাড়তে বাড়তে ভয়াবহ আকার ধারণ করতে শুরু করেধীরে ধীরে তার মনের ভয় মানসিক ব্যাধিতে রূপ নেয়এ মানসিক ব্যাধিই তার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়ায়এবং একসময় এই মানসিক ব্যাধিতেই তার স্ত্রীর মৃত্যু ঘটে।


শিয়াংচি তার স্ত্রীকে নিজের প্রাণের চেয়ে বেশি ভালোবাসতেনস্ত্রীকে তিনি নিজের সব কাজের প্রেরণা, তার সকল সাহসের কেন্দ্র মনে করতেনআর সেই স্ত্রী এখন থেকে আর তার পাশে থাকবে না একথা তিনি কিছুতেই ভাবতে পারছিলেন না তিনি অনেক ভাবা-চিন্তার পর সিদ্ধান্ত নিলেন ভালবাসা ও সাহসের প্রতীক তার স্ত্রীকে তিনি সর্বদা তার সাথেই রাখবেন। এরপর হঠাৎ তিনি এক অদ্ভুত কাজ করে বসলেনস্ত্রীর কবর খুঁড়ে তার মাথার খুলি বের করে আনলেনতিনি তার স্ত্রীর মাথার খুলিটি তার কোমরে শক্ত করে বেঁধে নিলেন এবং ঠিক করলেন বাকি জীবন তার স্ত্রীর মাথার খুলি তার সাথে সাথেই রাখবেন।

হ্যাঁ, সত্যি সত্যিই সবাইকে অবাক করে তিনি তার বাকি জীবন স্ত্রীর খুলিটি তার নিজের সঙ্গেই রেখেছিলেন স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি আরও ৩১ বছর বেঁচে ছিলেন এবং এই দীর্ঘ সময় তিনি এক মুহূর্তের জন্য তার স্ত্রীর মাথার খুলিটি কাছ ছাড়া করেননিযুদ্ধে গেলেও তিনি এটিকে তার সাথে নিয়ে যেতেনশিয়াংচির মৃত্যুর পর তার মৃতদেহের সাথে তার স্ত্রীর মাথার খুলিটিও কবর দেওয়া হয়যাতে অনন্তকাল শিয়াংচির সাথেই থাকে তার প্রিয়তমা স্ত্রীর মাথার খুলিটি। আজব হলে ও ঘটনাটি চীনের ইতিহাসে সত্যিকারের একটি অপূর্ব ভালবাসার নিদর্শন

২টি মন্তব্য:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.