Header Ads

দর্শনীয় সাতক্ষীরার মোজাফফর গার্ডেন এন্ড রিসোর্ট

সুন্দরবন বিধৌত বাংলাদেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের সর্বশেষ জেলা সাতক্ষীরা। নৈসর্গিক পরিবেশ সুন্দরবনের ছায়ায় ঘেরা এই জেলায় রয়েছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। প্রতি বছর শত শত মানুষ সাতক্ষীরা দিয়ে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন ভ্রমণ করে থাকে। বর্তমানে সুন্দরবনের পাশাপাশি পর্যটন, ভ্রমণ চিত্ত বিনোদনের ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে সাতক্ষীরার মোজাফফর গার্ডেন এন্ড রিসোর্ট।

ভ্রমণ, পিকনিক চিত্ত বিনোদনের সকল উপাদান নিয়ে দাড়িয়ে আছে এই দর্শনীয় মনোরম স্থানটি। আসুন আমরা বিস্তারিত জানি সাতক্ষীরার মোজাফফর গার্ডেন রিসোর্ট সম্পর্কে

সাতক্ষীরা শহরের প্রাণকেন্দ্র হতে মাত্র কিলোমিটার দূরে খড়িবিলা নামক স্থানে মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থিত সাতক্ষীরা মোজাফফর গার্ডেন এন্ড রিসোর্ট। এটি স্থানীয়ভাবে মন্টু সাহেবের বাগান বাড়ী নামেও পরিচিত। দক্ষিনাঞ্চলের সর্ববৃহৎ এই দর্শনীয় স্থান বা পিকনিক স্পটে প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন স্থান হতে হাজার হাজার দর্শনার্থী ভ্রমণ বা পিকনিকের জন্য আগমন করে থাকে। বছরের সকল সময়ই উদ্যানটি দর্শনার্থীদের দ্বারা মুখরিত থাকে তবে বিশেষভাবে শীত মৌসুমে দেশের বিভিন্ন জেলার দর্শনার্থীদের ভিড়ে উদ্যানটি পরিপূর্ন থাকে। সমস্ত গার্ডেন রিসোর্টটি ৪০ একর অর্থাৎ ১২০ বিঘা জমির উপর অবস্থিত এবং প্রতিবছর স্পটের এলাকা আরো বৃদ্ধি করা হচ্ছে। 

এই দর্শনীয় স্থানটি ব্যক্তি মালিকানায় তৈরি। যার ¯^ËvwaKvix সাতক্ষীরার কৃতি সন্তান জনাব খায়রুল মোজাফফর (মন্টু) তিনি শহরের উপকন্ঠে খড়িবিলা নামক স্থানে ১৯৮৯ সালে এই গার্ডেনের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। বর্তমানে এখানে দর্শন চিত্ত বিনোদনের সকল ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা শহর থেকে অল্প কিছু পথ গেলেই দেখতে পাবেন গার্ডেনের প্রবেশ পথে। যেখানে পাশাপাশি মুখ করে দাড়ানো আছে সূদৃশ্য দুটি ময়ূরের ভাষ্কর্য। গার্ডেনের প্রবেশের জন্য প্রথমেই টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট কাটতে হয়। যার মূল্য জনপ্রতি ২০ টাকা। গার্ডেনে প্রবেশ করার পর আপনি অনুভব করবেন মনোরম, ছায়া-সুশীতল এক নৈসর্গিক এক পরিবেশ।
 
গার্ডেনের অভ্যন্তরে রয়েছে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ, ফুল-ফল পশু-পাখির সমারোহ। উদ্যানের চারিদিকে অত্যন্ত দর্শনীয়ভাবে লাগানো হয়েছে ৬২৫টি বিভিন্ন জাতের আম, ৭২০টি নারিকেল ৭২৮টি মেহগনি গাছ। এছাড়াও সমগ্র উদ্যান জুড়ে লাগানো হয়েছে লিচু, আপেল, কমলা, ছবেদা, পেয়ারা, পামট্রি, কুল সহ বিভিন্ন প্রকারের কয়েকশত গাছ। সমস্ত গার্ডেন রিসোর্টটি মনোরমভাবে সুসজ্জিত করা হয়েছে বিভিন্ন জাতের হাজারো ফুল গাছ দিয়ে। 

উদ্যানের অভ্যন্তরে মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের অবতারনা করা হয়েছে বৃহদাকার ০৮টি লেক, একটি নেচারাল সুইমিং পুল দুটি বৃহদাকার মাছের এ্যাকুরিয়াম দিয়ে। এ্যাকুরিয়াম সমূহে নানান রঙের বিভিন্ন বিদেশী মাছ শোভা পাচ্ছে। বৃহদাকার লেক সমূহে মাছ চাষ করা হয়। দর্শনার্থীদের জন্য চমকপ্রদ একটি বিষয় হচ্ছে লেকে বড় বড় মাছ কর্তক ফিডার খাওয়া। দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বাথরুমও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে গার্ডেনে। পায়ে হাটার জন্য সুন্দর ঢালাই করা সাজানো-গোছানো পথ বসার জন্য সমগ্র গার্ডেন জুড়ে তৈরি করা হয়েছে টাইলস বাধানো বেঞ্চ। রাতে চলার জন্য সমগ্র গার্ডেন জুড়ে বিভিন্ন ডিজাইন রঙের বৈদ্যূতিক বাতি বসানো হয়েছে। যা রাতে গার্ডেনের চেহারাকে পরিবর্তন করে এক অন্য জগতের সৃষ্টি করে। 

এখানে যে সকল দর্শনার্থীরা আসেন তারা দিন রাতের উভয় সৌন্দর্যই উপভোগ করার জন্য চেষ্টা করেন। সমগ্র মোজাফফর গার্ডেন রিসোর্ট জুড়ে তৈরি করা হয়েছে হাতি, বাঘ, হরিন, জিরাফ, কুমির, পাখি, সাপ সহ নানা প্রাণীর ভাষ্কর্য। যা দর্শনার্থীদের মনে নতুন অভিজ্ঞতার সৃষ্টি করে। আপনি যদি চকলেটের খোলা, বিস্কুটের প্যাকেট বা এজাতীয় কিছু ফেলাতে চান সেক্ষেত্রে আপনার ফেলানো জিনিসটি গ্রহন করতে গার্ডেনে ক্যাঙ্গারু বা  হুতোম পেঁচার ভাষ্কর্য বেশে দাড়িয়ে আছে ডাষ্টবিন। নতুন ডিজাইনের এই ডাষ্টবিন গুলো প্রথম দেখাতে আপনি হয়তো আশ্চর্যও হতে পারেন।
 
গার্ডেনের ভিতরে দর্শনার্থীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে একটি মিনি চিড়িয়াখানা। যা ইতিমধ্যে দর্শনার্থী প্রাণী পিপাষূ মানুষদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এই মিনি চিড়িয়াখানায় হরিন, কুমির, সজারু, ময়ূর সহ বিভিন্ন প্রকারের পশু পাখি আছে। মোজাফফর গার্ডেন রিসোর্টে শিশুদের চিত্ত বিনোদনের নিমিত্তে তৈরি করা হয়েছে পৃথক শিশু পার্ক। সেখানে শিশুদের বিনোদনের জন্য নাগর দোলা, দোলনা, গাড়ী ড্রাইভিং সহ বিভিন্ন ইভেন্টের ব্যবস্থা আছে। লেকের পানিতে সবার জন্য আছে প্যাডেল চালিত বোট চড়ার ব্যবস্থা।  অতিথীদের সাঁতার কাটার জন্যও প্রস্তুত রাখা আছে সব ধরনের সাজ সরঞ্চাম।এছাড়াও এই গার্ডেনের ভিতরে রয়েছে আধুনিক একটি থ্রীডি থিয়েটার। যেখানে তৃতীয় প্রজন্মের প্রযুক্তি দ্বারা দর্শকদের নানা ধরনের ভিডিও ও ছবি দেখানো হয়।

বিশেষ করে শীত মৌসুমে দেশের বিভিন্ন জেলা হতে মানুষজন এখানে আসে পিকনিক বনভোজন করার জন্য। গার্ডেনে পিকনিক করার জন্য বর্তমানে মোট ১০৫টি স্পট আছে। পিকনিকে আগত নারী-পুরুষদের পোষাক পরিবর্তনের জন্য আছে আলাদা গৃহ। দূর-দূরান্ত থেকে যারা পরিবহনের মাধ্যমে এখানে পিকনিকের জন্য আসেন তাদের পরিবহন রাখার জন্য গার্ডেনর অপর পাশে প্রায় ২০-৩০ বিঘা জমির উপর রয়েছে  বিশাল গাড়ি পার্কিং এলাকা।
মোজাফফর গার্ডেনে দর্শনার্থীদের অবস্থানের জন্য রয়েছে একটি রিসোর্ট এলাকা। আধুনিক শিল্পকর্মে সুসজ্জিত একাধিক গেষ্ট হাউজ আছে এই এলাকায়। সেখানে ১৬টি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষসহ অনেকগুলো সাধারন কক্ষ আছে। 

বর্তমানে আরোও কয়েকটি নতুন গেষ্ট হাউজের নির্মাণ কাজ চলছে। অনেক দর্শনার্থী পরিপূর্ণভাবে সৌন্দর্য উপভোগের জন্য গেষ্ট হাউজ সমূহে কয়েকদিন অবস্থান করে থাকেন। গার্ডেনে ঢুকেই ডান ধারে চোখে পড়বে একটি তিনতলা বিশিষ্ট ভবন। পানির উপর নির্মিত তিনতলা এই ভবনটির নীচ তলায় রয়েছে আধুনিক খাবারে সাজানো একটি রেষ্টুরেন্ট। দ্বিতীয় তৃতীয় তলায় রয়েছে ২৫০ আসন বিশিষ্ট একটি সম্মেলন কক্ষ। বিভিন্ন দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠান সম্মেলন সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য এটি ভাড়া নিয়ে থাকেন। এখানে অতিথী সেবাদানের জন্য আছে প্রশিক্ষন প্রাপ্ত ওয়েটার নিজস্ব বাবুর্চ্চি খানা।

মুসলিম ধর্মপ্রাণ নামাজী মানুষদের নামাজের জন্য গার্ডেনের ভিতরে পুরুষ মহিলাদের জন্য পানির উপর নির্মাণ করা হয়েছে আলাদা দুটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ। এছাড়াও গার্ডেনে আছে নান্দনিক কৃত্রিম ফোয়ারা, রকমারি দোকানের সমাহার, হোটেল রেস্তোরা।

মোজাফফর গার্ডেন এন্ড রিসোর্টে আগত প্রত্যেক দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা, তাৎক্ষনিক সার্বক্ষনিক সেবা প্রয়োজনীয় প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। ভ্রমনে আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মী সবর্দা কর্মরত আছে। এছাড়াও সাতক্ষীরা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও দর্শনার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়ে থাকে।

সাতক্ষীরা মোজাফফর গার্ডেন এন্ড রিসোর্ট বর্তমানে দক্ষিনাঞ্চল তথা সমগ্র বাংলাদেশের মধ্যে একটি দর্শনীয় স্থান। বিশেষ করে শীত মৌসুম বছরের অন্যান্য সময়েও সারাদেশ থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনাথীর আগমন ঘটে এই উদ্যানে। প্রতিদিনের ব্যস্ত সময়ের মাঝে একটু সময় করে একদিন আপনিও ঘুরে আসতে পারেন সাতক্ষীরার মোজাফফর গার্ডেন এন্ড রিসোর্ট থেকে। ছায়া-সুশীতল নৈসর্গিক পরিবেশ আপনার সকল ক্লান্তি দূর করে কিছু সময়ের জন্য হলেও আপনাকে জোগাবে শান্তির পরশ।

২টি মন্তব্য:

  1. It's our proud for Satkhira. Thanks to you for your article about Mozaffar Gerden, Satkhira.

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. প্রবেশের টিকিটের মুল্য পঞ্চাশ টাকা যা অনেক বেশী

      মুছুন

Blogger দ্বারা পরিচালিত.