Header Ads

মানুষের শরীর জ্বালিয়ে তৈরি ইয়ঙলুর ঘণ্টার মর্মান্তিক ইতিহাস

চীনের তা চুং সু মন্দিরে রয়েছে বিশাল আকৃতির একটি ঘন্টাযার শব্দ ৩৭ মাইল দূর থেকেও শোনা যায়সম্রাট ইয়ঙলু এই ঘন্টাটি তৈরি করেনঘন্টাটি তৈরির পিছনে রয়েছে একটি মর্মান্তিক ঘটনাসম্রাট শহরের সবচেয়ে বড় কর্মকারকে তার মন্দিরের জন্য একটি বিশালাকার ঘন্টা তৈরির হুকুম দেনতিনি শর্ত হিসেবে জুড়ে দেন যে, ঘন্টাটির আওয়াজ হতে হবে প্রকান্ড কিন্তু শ্রুতিমধূরকয়েক মাস প্রচেষ্টার পর কর্মকার বিশাল আকৃতির একটি ঘন্টা তৈরি করলেন।

কিন্তু সম্রাটের ঘন্টাটির আওয়াজ পছন্দ হলো না এবং তিনি কর্মকারকে আরেকটি ঘন্টা তৈরি করতে বললেনকর্মকার ২/৩ মাস ধরে কঠিন পরিশ্রম করে আরেকটি বিরাটকায় ঘন্টা তৈরি করলেন কিন্তু এই ঘন্টাটির আওয়াজও সম্রাটের পছন্দ হলো নাপরপর দুবার ঘন্টা বানানোর পরও সম্রাটের পছন্দ না হওয়ায় সম্রাট কর্মকারকে আবার আরেকটি ঘন্টা বানাতে বললেন এবং তিনি এবার ঘোষনা দিলেন, যদি এইবার ঘন্টা পছন্দ না হয় তাহলে কর্মকারের গর্দান কাটা যাবে

এই ঘোষনা শুনে কর্মকার ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বাড়ি চলে গেল এবং ভাবতে লাগলো, সে তার সর্ব প্রচেষ্টা দিয়ে ঘন্টা তৈরি করছে কিন্তু ঘন্টা কেন ভাল হচ্ছে না? কর্মকার তার ভুল বুঝতে না পেরে শহরের এক জ্যোতিষীকে তার বাড়িতে ডেকে আনলো এবং তাকে সব ঘটনা খুলে বললোজ্যোতিষী সকল কথা শুনে তাকে বললেন, মন্দিরের দেবতা তার উপর রুষ্ট হয়েছেতাকে খুশি করতে হলে একটি নিষ্পাপ প্রাণ বিসর্জন দিতে হবেএই কথা শুনে কর্মকার আঁতকে উঠলেনতিনি ঠিক করলেন এবার তিনি তার সকল জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে একটি ঘন্টা তৈরি করবেনএতে যদি তার প্রাণও যায় তবে তার কোন আপত্তি নেই কিন্তু তিনি কোন শিশুর জীবন নিতে পারবেন না। 

কর্মকারের মাওআই নামে ১২ বছরের একটি মেয়ে ছিলসে পর্দার আড়ালে দাড়িয়ে সব কথা শুনলোতার বাবার বিপদ সে সহ্য করতে না পেরে সে সিদ্ধান্ত নিলো যে, নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে সে তার বাবাকে রক্ষা করবেকিন্তু কর্মকার তার মেয়ের কঠিন এই সিদ্ধান্ত কোন ক্রমেই জানতে পারেননিকর্মকার তার জীবনের সব জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নতুন করে ঘন্টা তৈরি করতে বিশাল চুল্লিতে লোহা গরম করছিলোশেষবারের মতো ঘন্টা তৈরি করতে লাল গনগনে লোহা টগবগ করে ফুটতে লাগলো।  হঠাৎ কোথা থেকে ছুটে এসে তার ছোট্ট মেয়ে মাওআই ঝাপিয়ে পড়লো চুল্লির পাতিলের উপরচোখের পলকে তার শরীর নিশ্চিহ্য হয়ে গেল গলিত লোহার মাঝেঘটনাটি যতই মর্মান্তিক হোক না কেন কর্মকার তার মেয়ের দেহমিশ্রিত লোহা দিয়েই চোখের জলে বুক ভাসিয়ে তৈরি করলেন একটি সুন্দর ঘন্টা

আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, সত্যি সত্যি এই ঘন্টার আওয়াজ হলো অনেক বেশী প্রকান্ড এবং শ্রুতিমধূরএই বিশাল এবং সমধুর শব্দের ঘন্টার কারণে সম্রাট কর্মকারকে পুরস্কৃত করলেন

বহু বছর পরে এ বিস্ময়কর ঘণ্টার ধাতব গুণাগুণ পরীক্ষা করতে গিয়ে বের হয়ে এলো আসল তথ্যআগের দু'বার ধাতু মিশ্রণে ত্রুটি থাকায় ঘণ্টা সঠিকভাবে তৈরি হয়নিকর্মকার তার পূর্বের বানানো ঘণ্টাগুলোতে কাঁসা, সোনা, রূপা, তামা ইত্যাদি মিশ্রণ ব্যবহার করেছিলকিন্তু ধাতুর আওয়াজ জোরালো করতে চাই ফসফরাস, যা তাতে ছিল না। 

তৃতীয়বার ওইসব ধাতুর মিশ্রণের সঙ্গে 'মাও-আইয়ের' দেহের ফসফরাস মিশে গিয়ে উকৃষ্ট মিশ্রণের সৃষ্টিতে ঘণ্টার আওয়াজ জোরালো হলোকারণ মানবদেহে প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস আছেতাই শেষবারে ঘণ্টার আওয়াজ হলো অনেক জোরালোসেই 'মাও-আইয়ের' দেহ মিশ্রিত ঘণ্টাটি এখনো চীন দেশে আছে চীন দেশের মানুষ আজো শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে সেই ছোট্ট মেয়েটির ত্যাগের কথা

1 টি মন্তব্য:

  1. সুন্দর একটি সাইট। এখানের তথ্য গুলি খুবই দারুণ। সাইটটি আমার খুবই পছন্দ হয়েছে।

    উত্তরমুছুন

Blogger দ্বারা পরিচালিত.