Header Ads

আমেরিকার নামকরণ যেভাবে করা হয়েছে

বর্তমান বিশ্বের পরাশক্তি বলা হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে। শক্তি-সামর্থ্য, ধন-সম্পদ, আধুনিকতা-ঐশ্বর্য সকল দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র বা আমেরিকা বর্তমান বিশ্বের এক নম্বর। বর্তমান বিশ্ব সভাকে যুক্তরাষ্ট্র তার নিজের ইচ্ছা মতো পরিচালিত করে থাকে। বিশ্বের প্রায় সকল রাষ্ট্র সমূহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কথা ও পরামর্শ দ্বারা পরিচালিত হয়। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র এমনই একটি দেশ, যার সাথে শত্রুতা করলে ভাগ্যে নেমে আসে করুণ পরিণতি। তবে এই পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নামক এই দেশটির এক সময় পৃথিবীর মানচিত্রে অস্তিত্ব ছিল না।

কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের মাধ্যমে এই স্থানটির গোড়াপত্তন হয়। যুক্তরাষ্ট্রের আরেক নাম আমেরিকা তবে আমরা অনেকেই হয়তো জানি না, কিভাবে এই আমেরিকা রাষ্ট্রের নামকরণ হয়েছে।

আজকের দুনিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেরা ধনী আর শক্তিশালী দেশ হিসেবে পরিচিতি পেলেও এর ইতিহাস আরম্ভ হয়েছে মাত্র ২০০ বছর আগেআমাদের জানা আছে যে, উত্তর আমেরিকা আর দক্ষিণ আমেরিকা দুটি স্বতন্ত্র মহাদেশ। আমেরিকা মহাদেশ আবিষ্কার করেন ক্রিস্টোফার কলম্বাসকিন্তু কলম্বাসের নামে এই মহাদেশ দুটির একটারও নামকরণ করা হয়নি। আমেরিকার নামকরণে রয়েছে এক মজার কাহিনী

কলম্বাস
কলম্বাস ছিলেন একজন বিখ্যাত ইতালীয় নাবিক পঞ্চদশ শতাব্দীর দিকে ভারতবর্ষের ঐশ্বর্যের কথা ইউরোপ সহ সমগ্র বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছিল। তখন ইউরোপ থেকে ভারতে স্থল পথে আসা যেত, তবে সেটা ছিল খুবই কষ্ট সাধ্য। ভারতের সুনাম ও খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকেই চাইছিল স্থলপথ ছাড়াও সমুদ্রপথে ভারতে আসতে। আর সেটির জন্য চলছিল ইউরোপ থেকে ভারতে আসার জল-পথের সন্ধান। 

ইতালীয় পর্যটক কলম্বাস নৌ-পথে ভারতে আসার জন্য জাহাজ নিয়ে ভারতবর্ষের খোজে বের হন। ১৪৯২ খ্রিস্টাব্দের ১২ অক্টোবর তিনি একটি দ্বীপে গিয়ে পৌঁছানদ্বীপটি ছিল বাহামা দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্গত, যার আগে নাম ছিল সান সালভেদর বর্তমান নাম ওয়াটলিং আইল্যান্ডকলম্বাস স্পেনের রাজা ফার্ডিনান্ড ও রাণী ইসাবেলার সম্মানে এই দ্বীপের নাম রাখেন সান সালভেদরকলম্বাস এই দ্বীপে পৌঁছে ভেবেছিলেন তিনি ভারতে পৌঁছে গেছেন। সেই সূত্রধরে বর্তমানে আটলান্টিক মহাসাগরের এই সকল দ্বীপপুঞ্জ সমূহকে একত্রে বলা হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ। 

এরপর কলম্বাস জাপানের পথে পাড়ি দিতে গিয়ে সান সালভেদরের দক্ষিণে হিসপানিয়োলায় পৌঁছান এবং তারপর তিনি কিউবায় গিয়ে পৌঁছান১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দে তৃতীয় নৌ-যাত্রায় কলম্বাস প্রথমে ত্রিনিদাদ এবং তারপর গিয়ে পৌঁছান দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের বর্তমান ভেনিজুয়েলাতেএদিকে সমুদ্রপথে ভারত বর্ষ আবিষ্কারের যখন এই সব কাণ্ড চলছিল তখন এক স্পেনীয় নাবিক ঘোষণা করেন যে, দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের মূল ভূখণ্ড পূর্বেই তিনি ১৪৯৭ খ্রিস্টাব্দের ১৬ জুন আবিষ্কার করে এসেছেনএই নাবিকের নাম ছিল আমেরিগো ভেসপুচ্চি। অবশ্য বিশেষজ্ঞদের মত হলো তিনি ১৪৯৯ খ্রিস্টাব্দের আগে সমুদ্রযাত্রাই করেননিকারণ সে বছরই আলন্সো দে ওখেদা ও ভেসপুচ্চি দক্ষিণ আমেরিকায় গিয়েছিলেন
আমেরিগো ভেসপুচ্চি
কলম্বাস যেমন স্পেনের রাজার সাহায্যে সমুদ্রযাত্রা করেন, আমেরিগো ভেসপুচ্চি তেমনি পর্তুগালের পতাকার নিচে ১৫০১ এবং ১৫০২ খ্রিস্টাব্দে যাত্রা করে দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিলে গিয়ে উপস্থিত হনভেসপুচ্চি এটা ঠিকই বুঝেছিলেন যে কলম্বাস যাকে ভারতবর্ষ ভেবে ভুল করেছিলেন সেটা আসলে একটা অনাবিষ্কৃত নতুন মহাদেশ ভেসপুচ্চির নিজের সমুদ্রযাত্রার বিষয়ের উপর লেখা এতই প্রসিদ্ধ লাভ করে ছিল যে, তাকেই দক্ষিণ আমেরিকার আবিষ্কারক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়জার্মানির ভূগোলবিদ ভাল্ডয়ে মুলার  ব্রাজিলকে আমেরিগোর সম্মানার্থে আমেরিকা আখ্যা দেনআমেরিকা নামটা এতই প্রচলিত হয়ে পড়ে যে, ব্রাজিল থেকে উত্তর আমেরিকা আর দক্ষিণ আমেরিকা দুই মহাদেশেরই নামকরণ হয় আমেরিকা

শেষকথায় বলা যায়, কলম্বাসই সর্বপ্রথম আমেরিকা আবিষ্কার করলেও তার ভুলের কারণে আমেরিকা আবিষ্কারক হিসেবে আমেরিগোর নাম অনুসারে যুক্তরাষ্ট্রের নাম আমেরিকা হয়ে যায়।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.