Header Ads

বাস্তব নয় সাজানো নাটক রেসলিং

আন্ডার টেকার বাতিস্তাকে উঁচু করে মারল এক আছাড়, এরপর রেফারি গুনলো এক - দুই - তিন, কিন্তু বাতিস্তা আর তার শরীরকে নাড়াতে পারলেন না। বাজিয়ে দেয়া হলো আন্ডার টেকারের বিজয়ের ঘণ্টা। এমন দৃশ্যের সাথে আপনারা অনেকেই পরিচিত আছেন। এটি রেসলিংয়ের একটি দৃশ্য। রেসলিং যাকে বাংলায় বলা হয় কুস্তি, বর্তমান বিশ্বে বিনোদনের এক প্রধান উৎস এটি। প্রথম দিকে রেসলিং  শুধুমাত্র আমেরিকায় জনপ্রিয় থাকলেও বর্তমানে এটি সমগ্র বিশ্বে সমান তালে জনপ্রিয়।

বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের দর্শক সংখ্যা ও সিডি-ডিভিডি বিক্রয়ের পরিসংখ্যান দেখলে এটি
সহজেই বোঝা যাযে রেসলিং বিশ্বে কতটা জনপ্রিয়। ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে বৃদ্ধরাও পর্যন্ত টিভিতে রেসলিং দেখে থাকেন রুদ্ধশ্বাস নিয়ে। আমরা সবাই রেসলারদের শক্তি সামর্থ্য, তাদের মার হজম করার ক্ষমতা, মারের টেকনিক দেখে অবাক হই। কখন কে জিতবে, কে কাকে কত মারতে পারে এই সকল বিষয়গুলো আমরা রেসলিং দেখার সময় অপলক দৃষ্টিতে দেখে থাকি। অনেকে আবার তাদের প্রিয় রেসলারের জয়ে আনন্দিত হয় আবার হয় দুঃখিত তার পরাজয়ে। 

তবে রেসলিংয়ের সবচেয়ে গোপন বিষয়টি হয়তো আমরা অনেকেই জানি না। আপনি শুনলে হয়তো বিশ্বাস করতে চাইবেন না, তবে বিষয়টি সত্য যে, রেসলিং কোনও খেলা নয়। এটি পাতানো নাটকের নিপুণ প্রদর্শনী। আমরা টিভিতে যে রেসলিং দেখে থাকি তা দর্শক বিনোদনের জন্য আগে থেকেই সাজিয়ে রাখা স্ক্রিপ্টের সফল অভিনয়। এই রেসলিং আন্তর্জাতিকভাবে খেলা হিসেবে স্বীকৃত নয়, এটি দর্শক বিনোদনের জন্য শুধুমাত্রই অভিনয়। তবে অলিম্পিক বা ফিলোতত্ত্বাবধানে যে কুস্তি প্রতিযোগিতা গুলো অনুষ্ঠিত হয় সেগুলো আলাদা। কারণ, এগুলো সত্যিকারের কুস্তির লড়াই।

রেসলিং হচ্ছে মানুষে-মানুষে লড়াই। ফলে একে আদিম মানুষের বন্য লড়াই বললেও ভুল হবে না। ঐতিহাসিক মতে ১৫ হাজার বছর পূর্বে প্রথম ফ্রান্সে উৎপত্তি হয়েছিল কুস্তি খেলার এবং আজকে যার আধুনিক রূপ রেসলিং। ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক কুস্তি ফেডারেশন, যার নাম ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব এসোসিয়েটেড রেসলিং স্টাইলস (ফিলো)। 

রেসলিংয়ে মেয়েদের ফ্রি স্টাইল যুক্ত হয়েছে ২০০৪ সালের অলিম্পিক খেলা থেকে। এর আগে ১৯৮৭ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ওয়ার্ল্ড ওমেন্স রেসলিং চ্যাম্পিয়নশিপ। বর্তমান রেসলিং আর তখনকার কুস্তির মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। ১৯৫২ সালে আমেরিকায় ওয়ার্ল্ড ওয়াইড রেসলিং ফেডারেশন (WWWF) এর ব্যানারে যাত্রা শুরু হয় বাণিজ্যিক পেশাদার রেসলিংয়ের। যার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রডেররিক ম্যাকমোহন। পরে ২০০২ সালে এসে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ওয়ার্ল্ড রেসলিং ইন্টারটেইনমেন্ট (WWE)। যার বর্তমান সদর দপ্তর অবস্থিত স্টামফোর্ডে।

বর্তমান সময়ের পেশাদার রেসলিংয়ের সব ম্যাচ থাকে পাতানো। ফলাফল আগে থেকেই থাকে নির্ধারিত। রেসলাররা বছরের পর বছর ধরে নিজেদের শরীরকে তৈরি করেন লৌহ মানবের মতো। এরপর তারা তাদের শরীরের কসরত দেখিয়ে অল্প কয় দিনেই বনে যান সুপার স্টার। অনেক রেসলার আবার তাদের জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে সিনেমা জগতেও সুযোগ পেয়ে যান। লাখো দর্শকের সামনে জীবন-মরণ, বিধ্বংসী যে লড়াই হয় তার সবটাই থাকে সাজানো নাটক। 

আর এই নাটককে বাস্তবের মতো ফুটিয়ে তোলা হয় রেসলারদের নিপুণ অভিনয়ে। রেসলিংয়ে রেসলারদের শরীর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাদের শরীর গুলো এমনভাবে লৌহমানবের মতো তৈরি করা হয় যাতে তাদের অভিনয় গুলো বাস্তবিক মনে হয়।

হেড কোয়ার্টার
আলো ঝলমল বিশাল ইনডোর স্টেডিয়াম বা আমরা যারা টিভি পর্দার সমানে বসে রেসলিং দেখি তারা সবাই মনে করি রিংয়ে যা হয় তার সবই সত্যি। তবে সত্য কথা এই যে, এগুলো সবই মিথ্যা। বিষয়টি পূর্বে কারো জানা ছিল না ফলে এটা যে অভিনয় তা অনেকে বিশ্বাস করতে চান না। WWE এর চেয়ারম্যান ভিন্স মিকম্যান এক ডকুমেন্টারিতে এই বিষয়টা স্বীকার করেছেন যে, রেসলিংয়ে সবই সাজানো নাটক এবং রেসলাররা সেই নাটকের অভিনেতা। তিনি বলেছেন, আমার যা করি দয়া করে আপনারা কেউ বাড়ি, স্কুল বা কোথাও এগুলো করার চেষ্টা করবেন না। এসব রপ্ত করতে আমাদের অনেক অনুশীলন করতে হয়। তারপরও আমরা অনেকে মাঝে মাঝে ইনজুরিতে পড়ি

প্রতিষ্ঠাতা
একজন রেসলারকে রিংয়ে নামার আগে তাকে তার অভিনয়ের বিষয়টি বিস্তারিত শিখিয়েদেয়া হয়। যাতে তিনি সামান্যতম ভুলও না করেন। কারণ, একটু ভুলই পারে রেসলিং যে অভিনয় তা দর্শকদের সামনে প্রমাণ করে দিতে। প্রতিটি রেসলিং কোম্পানির থাকে কয়েকজন স্ক্রিপ্ট লেখক। তারা খুব মন দিয়ে প্রতিটি খেলা দেখে থাকেন। কারণ একেকটি পর্ব মানেই একেকটি সিনেমা বা নাটকের মতো অভিনয়। পরের পর্বে কি দেখানো হবে সেটাও নির্ধারণ করা হয় আগের পর্ব দেখে। স্ক্রিপ্ট লেখকদের নির্দেশনা অনুযায়ীই মঞ্চে গিয়ে বলতে হয় রেসলারদের, লড়তেও হয় তাদের লেখা স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী। 

রেসলারদের জয়-পরাজয় আগেই থেকেই থাকে নির্ধারিত। দর্শকদের মাঝে রোমাঞ্চ বাড়ানোর জন্য থাকে নানান আয়োজন। সামনে কী ঘটতে যাচ্ছে তা না বুঝে দর্শকরা জেনো সেটা নিয়ে টেনশনে ভোগে, নিজের প্রিয় তারকার জন্য হাসে, কাঁদে আর প্রতিপক্ষকে দুয়োধ্বনি দেয় এসব নিশ্চিত করতে আগে থেকেই স্ক্রিপ্ট লিখে ধরিয়ে দেয়া হয় যার যার হাতে। যুদ্ধ চলাকালে যখন একজন আরেকজনের মাথায় বা গায়ে চেয়ার, রড, হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে তখন ভাবার কারণ নেই যে এটি সত্যি। কারণ এই চেয়ার, রড বা হাতুড়ি গুলো তৈরি করা থাকে বিশেষ উপায়ে। 

আর এই জিনিসগুলোর ভিতরে প্রবেশ করানো থাকে মাইক্রোফোন ফলে মারের শব্দগুলো কয়েকগুণ বেশী জোরে শোনা যায়। তবে রক্তের বেলায় রেসলারদের একটু যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়। শরীর থেকে রক্ত বাহির করার জন্য রেসলাররা কৌশলে নিজেদের শরীর নিজেরা ব্লেড দিয়ে হালকা কেটে ফেলেন। তারা কৌশলে রেফারির কাছ থেকে ব্লেড সংগ্রহ করেন আবার মাঝে মাঝে স্টেজে আসার পূর্ব থেকেই ব্লেড কাছে রেখে দেন। মুখের ভিতর থেকে রক্ত বাহির করার কৌশলটি আবার ভিন্ন। সেটি হচ্ছে, তারা পূর্ব থেকেই জিহ্বার তলায় ব্লাড ক্যাপসুল নিয়ে রাখেন। যখন দরকার হয় তখন তারা এই ক্যাপসুল দাঁত দিয়ে কেটে সমস্ত মুখ রক্তাত্ত করে ফেলেন।

যখন কোনও রেসলার জনপ্রিয় হয়ে উঠেন তখন বিভিন্ন কৌশল ও নতুন নতুন কাহিনী দিয়ে তাকে বারবার বিজয়ী করে দর্শকের আকর্ষণকে ধরে রাখা হয়। আর এই আকর্ষণকে পুঁজি করেই দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে রেসলিং নামের এই নাটক। তারা এই নাটকগুলো কৌশলে করে থাকে তবে অন্যরা করতে গেলে তাদের মারাত্মক ইনজুরি হবার আশংকা থাকে সেজন্য রেসলিং কমিটির পক্ষ থেকে বারবারই টিভিতে সতর্কতামূলক নির্দেশনা দিয়ে বলা হয় ‘Please don’t try this at home'.

২৪টি মন্তব্য:

  1. আমি আপনার সাথে একমত কারন আমিও রেসলিং খেলা বিশ্বাস করি না।তবে মনে হয় কিছু কিছু ক্ষেত্রে খেলোয়াড় গন আঘাত পেয়ে থাকেন।
    আমাদের এলাকা যথা খুলনা বাগেরহাটের লোকজন সম্ভবত একটু রেসলিং ভক্ত বেশি তাই তাদের সাথে বিতর্ক করলে জেতা যায় না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আপনার এই পোষ্ট তাদের পড়াতে হবে।
    যদি তাদের সুমতি হয়।

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. হ্যাঁ জনাব আবু তালেব আপনার কথা ঠিক। রেসলিং খেলা পুরোটাই ফাঁকিবাজি, তবে এটা করতে গিয়ে মাঝে মাঝে রেসলাররা অনেক সময় মারাত্নক আহত হয়ে থাকে। আপনি ইচ্ছা করলে এই বিষয়গুলো সবাইকে জানিয়ে রেসলিং বিষয়ে সবার ভুল ভাঙ্গাতে পারেন। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

      মুছুন
  2. ভাই আমার মনে একটা প্রশ্ন আছে। সেখানে রিংয়ের পাশে পাশে যে হাজার হাজার লোক বসে থাকে তারা কি ব্যাপারটা জানেনা?যদি জেনে থাকে, তাহলে তারা কি অভিনয় দেখতে ওখানে যায় । আর এ লেখার সূত্র জানালে উপকৃত হব।

    উত্তরমুছুন
  3. জনাব Abdullah আপনার প্রশ্নের উত্তরে বলছি, রিংয়ের পাশে যে হাজার হাজার লোক বসে থাকে তারা সবাই জানে যে এটি কোনও প্রকৃত খেলা নয় তবে তারা সেখানে আসে শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য। উন্নত বিশ্বে সামান্য একটু বিনোদনের জন্য লোকেরা প্রচুর সময় ব্যয় করতে ও অর্থ খরচ করতে দ্বিধা করে না। তবে আমাদের দেশের মানুষেরা এটিকে সত্যি মনে করে টিভি'র পর্দায় বসে থাকে। শুধুমাত্র উন্নত বিশ্বের লোকেরা নয় বিশ্বের সবাই জানে যে, হলিউড, বলিউড বা ঢালিউডের নির্মিত সিনেমাগুলো সত্যি নয় এগুলো অভিনয় করে তৈরি করা শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য। তারপরও আমরা সবাই কিন্তু সিনেমা হলে গিয়ে অনেকে মিলে সেটা দেখে থাকি। মিথ্যা জেনেও আমরা যেমন হলে বসে সিনেমা দেখি তারাও তেমনি মিথ্যা জেনেও রিংয়ের পাশে বসে খেলা দেখে। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

    উত্তরমুছুন
  4. Ami
    onek din theke dekhe asci Sumon vai ai siter maddhome onek chomokprodo o
    shikhonio bisoy post kore ascen.Dhonnobad janay Sumon vaier ai kaj ke.

    উত্তরমুছুন
  5. এই খেলাটি যে সাজানো নাটক আপনি কিভাবে জানলেন?@ সুমন ভাই।

    উত্তরমুছুন
  6. এই খেলাটি যে সাজানো নাটক আপনি কিভাবে জানলেন?@ সুমন ভাই।

    উত্তরমুছুন
  7. এই খেলাটি যে সাজানো নাটক আপনি কিভাবে জানলেন?@ সুমন ভাই।

    উত্তরমুছুন
  8. এই খেলাটি যে সাজানো নাটক আপনি কিভাবে জানলেন?@ সুমন ভাই।

    উত্তরমুছুন
  9. এই খেলাটি যে সাজানো নাটক আপনি কিভাবে জানলেন?@ সুমন ভাই।

    উত্তরমুছুন
  10. এই খেলাটি যে সাজানো নাটক আপনি কিভাবে জানলেন?@ সুমন ভাই।

    উত্তরমুছুন
  11. এই খেলাটি যে সাজানো নাটক আপনি কিভাবে জানলেন?@ সুমন ভাই।

    উত্তরমুছুন
  12. এই খেলাটি যে সাজানো নাটক আপনি কিভাবে জানলেন?@ সুমন ভাই।

    উত্তরমুছুন
  13. এই খেলাটি যে সাজানো নাটক আপনি কিভাবে জানলেন?@ সুমন ভাই।

    উত্তরমুছুন
  14. wwe একটা টিভি শো। এতে স্ক্রিপ্ট ঠিক করা থাকে। যদি এটা ভাল না লাগে, আসল ফাইট দেখতে চান, তবে tna, ufc, wcw, ecw ইত্যাদি দেখতে পারেন। এছাড়া, নেটে খুজলে আরো পেয়ে যাবেন... ধন্যবাদ।

    উত্তরমুছুন
  15. কোন বিশস্ত লিংক থাকলে please দিবেন!

    উত্তরমুছুন
  16. "WWE LIVE IN INDIA" সুমনদা এই সিনেমা হযে ছিল IGI সেটডিয়ামে এই সেটডিয়ামে এর রিঙ্গএ কী TV-র Screen লাগানো ছিল।

    উত্তরমুছুন
  17. "WWE LIVE IN INDIA" সুমনদা এই সিনেমা হযে ছিল IGI সেটডিয়ামে এই সেটডিয়ামে এর রিঙ্গএ কী TV-র Screen লাগানো ছিল।আর এই সিনেমা দেখার জন্য আমাদের দেশ মানে ভারত দেশ এর মানুষদের আপনি টিকিট কিনে দিয়েছিলেন। কারন ভারতের মানুষ টাকা খরচা করতে দ্বিধা করে।

    উত্তরমুছুন
  18. As in other professional wrestling promotions, WWE shows are not legitimate contests, but purely entertainment-based, featuring storyline-driven, scripted, and choreographed matches, though they often include moves that can put performers at risk of injury if not performed correctly. This was first publicly acknowledged by WWE's owner Vince McMahon in 1989 to avoid taxes from athletic commissions. Since the 1980s, WWE publicly has branded their product as sports entertainment, acknowledging the product's roots in competitive sport and dramatic theater.

    https://en.m.wikipedia.org/wiki/WWE

    উত্তরমুছুন
  19. http://mobile.abc.net.au/news/2017-10-04/its-all-fake-right-a-professional-wrestler-explains-everything/9010474

    উত্তরমুছুন
  20. http://mobile.abc.net.au/news/2017-10-04/its-all-fake-right-a-professional-wrestler-explains-everything/9010474

    উত্তরমুছুন
  21. আমি সেসব জনগন দের বলতে চাই,1998 তে একবার কেন আন্ডারটেকাr ke casket e dukiye agun লাগিয়ে দেই। এই explain din। J ki kore undertaker সেখান থেকে বাঁচলেন?

    উত্তরমুছুন
  22. আমি সেসব জনগন দের বলতে চাই,1998 তে একবার কেন আন্ডারটেকাr ke casket e dukiye agun লাগিয়ে দেই। এই explain din। J ki kore undertaker সেখান থেকে বাঁচলেন?

    উত্তরমুছুন

Blogger দ্বারা পরিচালিত.